প্যালেস্তাইনে এক বিয়ে বাড়িতে মুখোশ পরে নাচ।—ছবি এএফপি
নোভেল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত নন অল্পবয়সিরাও। আজ এক বিবৃতিতে তা স্পষ্ট জানিয়ে সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার প্রধান টেডরস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণে প্রবীণদের প্রাণের ঝুঁকি বেশি থাকলেও, অল্পবয়সিরা রেহাই পাবেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারা কেউই সুরক্ষিত নন। এই ভাইরাস সংক্রমণে আপনাদের হাসপাতালে যেতে হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আপনাদের যদি কিছু না-ও হয়, আপনার স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অন্যদের প্রাণ বিপন্ন হতে পারে। অতএব সতর্ক হোন।’’
করোনা-আক্রান্ত হয়ে গোটা বিশ্বে শনিবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৯৭২ জনের। আক্রান্ত ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৬৪ জন। আজ এই নিয়ে তিন দিন হল, চিনে নতুন করে স্থানীয় ভাবে আর সংক্রমণ ছড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। যার উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, ‘‘উহান (চিনের যে প্রদেশ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়) সারা বিশ্বকে আশা দেখাচ্ছে’’। তবে সে দেশে আশঙ্কা বাড়াচ্ছেন বাইরে থেকে আসা আক্রান্তেরা। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আজ জানিয়েছে, চিনের মূল ভূখণ্ডে ৪১টি নতুন ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তরা অধিকাংশ এসেছেন আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে। সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আসা আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৯। সেরে ওঠার মুখে এই দ্বিতীয় দফার ধাক্কার চিন্তায় চিন।
বিশ্ব জুড়ে করোনা-ত্রাসে অধিকাংশ দেশই শাট ডাউন ঘোষণা করেছে। শনিবার সেই পথে হাঁটল ব্রিটেন। মৃতের সংখ্যা ৩৯ থেকে ১৭৭ হওয়ার পরেই কাফে, বার, পাব, জিম, সিনেমা হল, থিয়েটার-সহ যাবতীয় জমায়েত নিষিদ্ধ করলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেন, ‘‘এই সব জায়গাগুলি মানুষের একত্রিত হওয়ার জন্যই তৈরি। কিন্তু আজ থেকে আমরা অন্তত শারীরিক ভাবে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে চাইছি।’’ জনসন বলেছেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ যত নিখুঁত ভাবে পালন করবেন, তত দ্রুত দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উন্নতি হবে।’’
সংক্রমণের নিরিখে ইটালি, স্পেন ও ফ্রান্সের পরে থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্রিটেনের নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা দফতরের হাতে রয়েছে সাকুল্যে ৪ হাজার ‘ক্রিটিকাল কেয়ার বেড’ ও ৫ হাজার ‘ভেন্টিলেটর’। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক কম মনে করছেন চিকিৎসকেরা। ব্রিটেনে ৬৫ হাজার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সকে কাজে ফিরতে বলা হয়েছে।
আজ থেকে কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ করল মার্কিন সরকার। ক্যালিফর্নিয়ায় ইতিমধ্যেই আক্রান্ত ১২৫৫, মৃত ২৪। যার জেরে প্রায় ৪ কোটি লোক গৃহবন্দি। নিউ ইয়র্কে আক্রান্ত আট হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত ৫৬। রবিবার থেকে লক ডাউন ঘোষণা হয়েছে এখানেও। দেশের সর্বাধিক জনবহুল তিন শহর নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগো লক ডাউন হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এখনই গোটা দেশ ‘তালাবন্দি’ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না তিনি।
মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজেরা লড়াই চালানোর পাশাপাশি করোনা-সংক্রমণ রুখতে বাকি বিশ্বের পাশে দাঁড়াচ্ছে চিন। ভারত-সহ ১০টি দেশের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে করোনা প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করবে বেজিং। আগামী কালই সাইবেরিয়ায় চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে শি চিনফিং সরকার। চিন থেকে প্রয়োজনীয় পোশাক যাচ্ছে লাইবেরিয়ায়। ফিলিপিন্সে পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ১ লক্ষ সরঞ্জাম। ১০টি বিমানে কয়েক লক্ষ মাস্ক ও নানা সরঞ্জাম যাচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্রে।
২২ মার্চ থেকে এক সপ্তাহের জন্য ভারতে আন্তর্জাতিক যাত্রী বিমান নামা বন্ধ করেছে কেন্দ্র। তার আগে ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে যে ভারতীয়রা দেশে ফিরতে চান তাঁদের জন্য নির্দেশিকা জারি করল দূতাবাস। রাশিয়া, ব্রাজিল, কিউবা, ফিনল্যান্ড, জাপান, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের জন্যও হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। আগামী দু’সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ করেছে পাকিস্তানও। বাতিল হয়েছে ৩৪টি ট্রেন। সংক্রমণের আশঙ্কায় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে আটক কিছু বিচারাধীন বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। পাকিস্তানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৫৩৪ জন। মৃত তিন। আক্রান্তের হার সর্বাধিক সিন্ধু প্রদেশে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা থাবা বসাতে পারেনি দেশটিতে। ইরান থেকে করাচিতে ফেরা এক যুবকের শরীরে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর কিছু দিন বাদে ইরান থেকে ফেরা এক দল পুণ্যার্থী আক্রান্ত হন। এর পরেই ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ।