—ছবি এএফপি।
ফের রেকর্ড আমেরিকায়। এক দিনে ২৭৩১ মৃত্যু করোনা-সংক্রমণে। গত এক বছরে ভাইরাসের কোপে ২ লক্ষ ৭৯ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এত সংখ্যক দৈনিক মৃত্যু এই প্রথম!
ভয়াবহতার শেষ এখানেই নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৯৫। দৈনিক সংক্রমণ এখন দু’লাখের আশপাশেই থাকছে। নভেম্বরে প্রতি সপ্তাহে ১০ লক্ষ মানুষ নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। ‘কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্ট’ নামে একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানাচ্ছে, মিনিটে গড়ে ৯৯ জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই সংস্থাই জানিয়েছে, এই মুহূর্তে আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে মোট ১ লক্ষ ২২৬ জন করোনা-আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। গত এক বছরে এ রকম পরিস্থিতি এই প্রথম।
পরিস্থিতি যে এ রকম হবে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি। কারণ হিসেবে জানিয়েছিল, যে পরিমাণ লোক থ্যাঙ্কসগিভিংয়ে পার্টি করেছেন, তাতে সংক্রমণ বাড়বে। প্রশাসনের এখন চিন্তা, এত রোগীর চিকিৎসার ভার তারা সামলাবে কী ভাবে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ হাসপাতালে আর শয্যা ফাঁকা নেই। একটানা পরিষেবা দিয়ে ক্লান্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের একটা বড় অংশও করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সামনে শীত। ‘সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)-এর ডিরেক্টর রবার্ট রেডফিল্ড বলেন, ‘‘বাস্তব হল এটাই যে, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি, এই তিনটে মাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে কঠিনতম অধ্যায় হতে চলেছে।’’ সিডিসি-র আর এক আধিকারিক সিন্ডি ফ্রেডম্যান পর্যটকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের পরামর্শ না-মেনে বহু লোকজন থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। হয়তো যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাস ছিল, কিন্তু তাঁদের থেকে সংক্রমণ হয়তো কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ছড়িয়ে গিয়েছে আশপাশের লোকজনের মধ্যে।’’
আরও পড়ুন:ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত, চিনকে হুঁশিয়ারি ভারতের নৌপ্রধানের
ক্যালিফর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লরিডা— এই তিনটি প্রদেশের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থাও এদের। প্রতিটি প্রদেশে ১০ লক্ষের বেশি করোনা-আক্রান্ত। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ভয়ানক বেড়েছে সংক্রমণ। মেয়র এরিক গারসেট্টি আজ একটি জরুরি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, কোনও বাসিন্দা বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। বর্তমানে আমেরিকায় সংক্রমণের এপিসেন্টার লস অ্যাঞ্জেলেস।
আরও পড়ুন: মোট আক্রান্ত ৯৫ লক্ষ ছাড়াল, দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ কমলেও চিন্তা বাড়াচ্ছে কেরল
১০ ডিসেম্বর আমেরিকার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক দফতর ভ্যাকসিন নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে। ওই বৈঠকে মডার্নার প্রতিষেধকটিকে তারা ছাড়পত্র দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৭ ডিসেম্বর ফাইজ়ার নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। এর মধ্যে আমেরিকার নয়া নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই অতিমারি পরিস্থিতি সামলাতে একটা বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য দেওয়া হবে কংগ্রেস থেকে।
হ্যারির কথায়: প্রকৃতিরই পাল্টা মার নভেল করোনাভাইরাস। মন্তব্য ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারির। পরিবেশ বিষয়ক একটি আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘‘অতিমারির শুরুতে এক জন আমায় বলেছিলেন, আমাদের খারাপ আচরণের জন্য প্রকৃতি-মা আমাদের ঘরে বন্দি করে শাস্তি দিচ্ছেন।’