Moderna

আরও ভাল টিকা! টক্কর মডার্নার

কেউ প্রকাশ্যে মুখ না-খুললেও বিষয়টা স্পষ্ট, ভ্যাকসিনের বাজার দখল করতে ‘প্রতিযোগিতা’ চলছেই। সব ঠিক থাকলে বছরশেষের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে দুই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫০
Share:

ছবি: এএফপি।

ফের চমক। গত সপ্তাহে প্রথম সুখবর দিয়েছিল ফাইজ়ার। বলেছিল, তাদের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশ কার্যকরী। দু’দিন বাদে রাশিয়া বলে, তাদের ‘স্পুটনিক ভি’ ৯২ শতাংশ কাজ দিচ্ছে। আজ আমেরিকার আর এক ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা মডার্না দাবি করল— করোনা-রোধে আরও ভাল কাজ করছে তাদের ভ্যাকসিন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক বিশ্লেষণে ৯৫ শতাংশ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে প্রতিষেধকটি। ‘গুরুতর অসুস্থ’ ক্যাটেগরিতেও ‘অসামান্য’ ফলাফল।

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বড়দিনের আগে সুখবর আসছে। ভাল খবর চলে এল মাঝ-নভেম্বরেই। আর একটা চমক মিটতে না-মিটতেই নতুন চমক। সাত দিন আগে আমেরিকার ফাইজ়ার ও তার জার্মান অংশীদার সংস্থা ‘বায়োএনটেক’ দাবি করেছে, তাদের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী। মডার্না আজ বলেছে, তাদের ‘ক্যান্ডিডেট’ আরও কার্যকরী। এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ না-খুললেও বিষয়টা স্পষ্ট, ভ্যাকসিনের বাজার দখল করতে ‘প্রতিযোগিতা’ চলছেই। সব ঠিক থাকলে বছরশেষের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে দুই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’।

আমেরিকার করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান তথা, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজ়িজ়’-এর ডিরেক্টর অ্যান্টনি ফাউচি বলেন, ‘‘অসম্ভব ভাল খবর। ট্রায়ালের তথ্য দেখলেই সবটা স্পষ্ট হয়ে যায়।’’ মডার্নার প্রতিষেধকটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট তিন জন বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে এক জন হলেন ফাউচি। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেকে বাস্তববাদী বলেই মনে করি। কিন্তু একই সঙ্গে আশাবাদীও, তবে সতর্কতার সঙ্গে। আমার মনে হচ্ছে, ওরা যতটা বলছে, তার থেকে কম... তবে প্রতিষেধকটি ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকরী হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা টিকার তথ্য হাতাতে সাইবার হানা, জানাল মাইক্রোসফ্‌ট

আরও পড়ুন: আমেরিকায় টানা ১১ দিন নতুন সংক্রমণ ১ লক্ষের উপর, আরও সঙ্কটে অর্থনীতি

মডার্নার ভ্যাকসিনটি তৈরিতে যুক্ত ছিল ‘ফাউচি’স ইনস্টিটিউট’ও। ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে পরীক্ষা হয়। অর্ধেককে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ় দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের অন্য কিছু (প্লাসিবো)। এর পর পর্যবেক্ষণে রাখা হয় অংশগ্রহণকারীদের। দেখা যায়, যাঁরা করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৯৫ শতাংশ প্লাসিবো-গ্রুপে ছিলেন, অর্থাৎ ভ্যাকসিন পড়েনি তাঁদের। ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই প্লাসিবো-গ্রুপের। এমনকি নিশ্চিত ভাবে করোনা-আক্রান্ত প্রত্যেকেও প্লাসিবো-দলে ছিলেন। এ থেকে গবেষণায় যুক্ত বিশেষজ্ঞদের দাবি, মডার্নার প্রতিষেধকটি করোনা-রোধে কাজ দিচ্ছে। তাই যাঁদের সেটি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কোভিড-১৯ হয়নি।

ট্রায়ালের রিপোর্ট এখনও কোনও জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। ভ্যাকসিনের

কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা চলবে বলে জানানো হয়েছে। তবে ফাউচি-র কথায়, ‘গুরুতর অসুস্থ’ ক্যাটেগরিতে এর প্রভাব বেশ ‘প্রশংসনীয়’।

আরও একটি বিষয়ে মডার্নার ভ্যাকসিন নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে। সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই একে মজুত করা যায়। ফলে সাধারণ কোল্ড স্টোরেজেই একে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো যাবে। ভ্যাকসিন সরবরাহ প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হবে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে যা সত্যিই লাভজনক। মডার্নার দাবি, মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৬ মাস পর্যন্ত অক্ষত ভাবে মজুত করা যাবে ভ্যাকসিনটি। সাধারণ বাড়ির রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যাবে। ঘরের তাপমাত্রায় ১২ ঘণ্টা ঠিক থাকবে। সে দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ফাইজ়ার। তাদের তৈরি ভ্যাকসিন মজুত করতে আল্ট্রা কোল্ড-স্টোরেজ প্রয়োজন। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এটি ছ’মাস মজুত রাখা যাবে। সাধারণ রেফ্রিজারেটরে মাত্র ৫ দিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে।

ফাইজ়ারের থেকে এক কোটি ডোজ় কিনেছে ব্রিটেন। তবে এ পর্যন্ত মডার্নার সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছেন, জোরকদমে কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে বড়দিনের আগেই টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে। আমেরিকা অবশ্য এখনও কিছু জানায়নি, টিকা দেওয়া কবে থেকে শুরু হবে। ফাইজ়ার আর মডার্নার মধ্যে কার টিকা বেছে নেওয়া হবে, সে নিয়েও চুপ ফাউচি-র টিম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেড়শোরও বেশি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে গোটা বিশ্বে। এর মধ্যে ৪৪টি ক্যান্ডিডেটের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ১১টি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা জুটিও বড়দিনে খবর দেবে বলেছিল। এ বার কি তাদের ফল ঘোষণার পালা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement