আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস, প্রশ্বাস থেকেও ছড়াতে পারে নতুন করোনাভাইরাস ‘কোভিড-১৯’। ছড়াতে পারে কথা বলার সময়েও। বায়ুর মাধ্যমে। অন্তত তিন ঘণ্টা সেই ভাইরাস টিঁকে থাকতে পারে বায়ুতে। কোভিড-১৯ বায়ুতে থাকলে কোনও নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে তাকে আটকে রাখার কাজটাও অনেক কঠিন।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ভিত্তিতে শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ (এনআইএইচ)’-এর সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান অ্যান্টনি ফাওসি। গবেষণাটি চালানো হয়েছে এনআইএইচ-এর অর্থসাহায্যে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’) এর আগে জানিয়েছিল কোভিড-১৯ সাধারণ ভাবে বায়ুবাহিত ভাইরাস নয়। হাঁচি, কাশির সময় যে ড্রপলেট বেরিয়ে আসে, সেখান থেকেই ছড়ায় এই ভাইরাস। কিন্তু ফাওসি গত কাল বলেছেন, ‘‘শুধুই সর্দি, কাশি, কফ ও হাঁচির সঙ্গেই কোভিড-১৯ ছড়ায় তা নয়; আমাদের কথা বলা ও স্বাভাবিক শ্বাস, প্রশ্বাসের সময়েও এই ভাইরাসে বায়ুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে।’’
ফলে, কাদের মাস্ক পরা উচিত, সেই ধারণাও এ বার বদলে গেল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যাঁরা খুব সর্দি, কাশিতে ভোগেন, জমাট বাঁধা কফে কষ্ট পান, যাঁদের হাঁচি হয় খুব, সংক্রমণ রুখতে এত দিন শুধু তাঁদেরই মাস্ক পরতে বলছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি অংশ এখন মনে করছেন, মাস্ক সকলেরই পরা উচিত। কারণ, আমরা কথা বললেও, আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস, প্রশ্বাসের সময়েও কোভিড-১৯ বায়ুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন- এক লাফে ৬০১ বেড়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ২৯০২, মৃত্যু বেড়ে ৬৮
আরও পড়ুন- গোটা বিশ্বে লকডাউনের হাল কী, জানাল গুগল
এই সাম্প্রতিক গবেষণার পর্যবেক্ষণ ও ফলাফল সম্পর্কে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (এনএএস) গত ১ এপ্রিল হোয়াইট হাউসকে লেখা একটি চিঠিতে সবিস্তারে জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘গবেষণা এখনও শেষ হয়নি। তবে এখনও পর্যন্ত তা যতটা এগিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস, প্রশ্বাস, কথা বলার সময়েও এই ভাইরাস বায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’
যদিও হু এবং এনআইএইচ আগে জানিয়েছিল, যাঁদের সর্দি ও কফ আছে, এমন কারও হাঁচি, কাশির সময় বেরিয়ে আসা ড্রপলেটেই থাকে কোভিড-১৯। যার ব্যাস হয় বড়জোর এক মিলিমিটার। এই ড্রপলেটগুলি খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে মাটিতে। ছড়িয়ে পড়তে পারে এক মিটার দূর পর্যন্ত। তার পর আর সেই ভাইরাস ছড়াতে পারে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমাদের কথা বলা ও স্বাভাবিক শ্বাস, প্রশ্বাসের সময় এই ভাইরাস বায়ুতে মিশলে তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তখন তার ছড়িয়ে পড়াটা কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে আটকে রাখার কাজটা কঠিনতর হয়ে পড়ে।
তবে এই গবেষণা নিয়ে কিছু বিতর্কেরও সূত্রপাত হয়েছে। সমালোচকদের বক্তব্য, নেবুলাইজার দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে এই গবেষণায়। তাই এমন ফলাফল হয়েছে। এর আগে নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, করোনা আক্রান্তকে যে আইসোলেশন রুমে রাখা হয়েছে, তার বায়ুতে কিন্তু কোভিড-১৯-এর আরএনএ-গুলির হদিশ মিলছে না। যার ইঙ্গিতও ছিল, কোভিড-১৯ ভাইরাস বায়ুবাহিত নয়। কারণ, বায়ুবাহিত হলে এই ভাইরাসকে আক্রান্তের আইসোলেশন রুমেও পাওয়া যেত।
মার্কিন বিজ্ঞানীরা আরও দু’টি সাম্প্রতিক গবেষণার উল্লেখ করেছেন। একটি হংকং-এর। অন্যটি চিনের। কোনওটিই এখনও কোনও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। হংকং-এর গবেষণা দেখিয়েছে, মাস্কের বাতাসে ভেসে থাকা অ্যারোসল কণা বা হাঁচি, কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা ড্রপলেটের পরিমাণ কমে যায়। আবার চিনা গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, করোনা আক্রান্তের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেগুলিও বায়ুবাহিত কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস হয়ে উঠতে পারে।