মাস্কবিহীন পর্যটক ক্যালিফোর্নিয়ায়। ছবি রয়টার্স।
টিকাকরণ জোরকদমে চলছে আমেরিকায়। দৈনিক সংক্রমণ অনেকটাই কম। কিন্তু তাই বলে অতিমারি তো শেষ হয়ে যায়নি! সপ্তাহ শেষের ভিড় দেখে অবশ্য সে কথা বোঝার উপায় নেই। মেমোরিয়াল ডে-র ছুটিতে রাস্তায় উপচে পড়ল ‘মাস্কহীন’ ভিড়।
১৩ মে নতুন নির্দেশিকায় ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) বলেছে, যাঁদের টিকার দু’টো ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে, প্রকাশ্য স্থানে তাঁদের আর মাস্ক না-পরলেও চলবে। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি না-মানলেও হবে। কিন্তু এই ঘোষণায় মাস্ক-হীন প্রায় সকলেই!
সরকারি হিসেব বলছে, আমেরিকার অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ মেমোরিয়াল ডে-র ছুটিতে বাড়ি থেকে কমপক্ষে ৫০ মাইল দূরে বেড়াতে গিয়েছেন। ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এই ছুটিতে রাস্তায় ভিড় ১৩ শতাংশ কম। কিন্তু ২০২০-র থেকে ভিড় বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। রেকর্ড গড়েছে বিমানযাত্রাও। খবর, এক দিনে ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ আমেরিকার বিভিন্ন বিমানবন্দরে গিয়েছেন।
সিডিসি জানিয়েছে, আমেরিকার জনসংখ্যার ৫০.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ বাসিন্দা অন্তত টিকার একটি ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন। ৪০.২ শতাংশের দু’টি ডোজ়ই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গত কালই জো বাইডেন প্রশাসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে জানিয়েছিলেন, টিকাকরণ দারুণ গতিতে চলছে। গরমের ছুটি শুরুর আগে দেশের করোনা-পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। বলেছিলেন, ‘‘আমরা যে শুধু প্রাণ বাঁচাচ্ছি, তা নয়। আমরা ধীরে ধীরে পুরনো জীবনেও ফিরছি।’’ টিকাকরণের হাত ধরেই যে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা সম্ভব, তা-ও বারবার করে বলেন তিনি।
আমেরিকায় এখনও গড়ে দৈনিক সংক্রমণ ২১,৬০০। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এ বছর বসন্তে সংক্রমণ যখন শীর্ষ ছুঁয়েছিল, তার থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ কম। কিন্তু তা হলেও ২১ হাজার সংখ্যাটি নেহাত কম নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। গত বছর থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের ছুটির আগে বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করেছিলেন, ছুটিতে পর্যটন খুলে দিলে সংক্রমণ মারাত্মক বাড়বে। সেটাই হয়েছিল। ডিসেম্বর-জানুয়ারি সংক্রমণ শীর্ষ ছুঁয়েছিল। দৈনিক প্রায় দু’লক্ষের কাছাকাছি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সাজু ম্যাথিউ বলেন, ‘‘এ বছর অতটা ভয়ের কিছু দেখছি না। টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে একটা বড় অংশের।’’ কিন্তু মাস্ক-বিধি যে মানুষ ভুলতে বসেছে, সেটা নিয়ে চিন্তায় ম্যাথিউ। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই মাস্ক খুলে ফেলছেন। এতে যাঁরা এখনও প্রতিষেধক পাননি, তাঁদের জন্য বিপদ বাড়ছে।’’ সিডিসি-র আপাতত লক্ষ্য— পরবর্তী ঢেউ আছড়ে পড়ার আগে টিকাকরণ প্রায় শেষ করে ফেলা।