ছবি এপি।
করোনা-যুদ্ধে আশার আলো দেখিয়ে অক্সফোর্ড ইঙ্গিত দিয়েছিল, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই আসছে প্রতিষেধক। আজ সেই জল্পনায় জল ঢেলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দাবি করলেন, ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক পেতে এক বছর অপেক্ষা করতেই হবে। এমনকি ‘অব্যর্থ প্রতিষেধক’ কোনও দিন না-ও পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করলেন গোড়ায় ‘হার্ড ইমিউনিটি’-র পক্ষে সওয়াল করা বরিস।
করোনা-মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে ব্রিটেন। তাই ওষুধ কিংবা প্রতিষেধককে স্থায়ী সমাধান বলে মেনে নিয়েও এই মুহূর্তে ধাপে ধাপে লকডাউন তোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে বলে দেশবাসীকে সতর্ক করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে বহু দেশই শিথিল করছে লকডাউন। ৭৬ দিনের তালাবন্দি দশা কাটিয়ে ৮ এপ্রিল থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছিল চিনের উহান শহর, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। তবু এড়ানো গেল না দ্বিতীয় দফার করোনা-ঝড়। নতুন করে পাঁচ-ছ’জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলার পরে আজ জানা গেল, পরিস্থিতি সামাল দিতে গোটা উহান শহরের প্রায় ১ কোটি ১১ লক্ষ নাগরিকের বিশেষ স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাবে প্রশাসন। নির্দেশিকা না-মেনে ‘ওপেন আমেরিকা এগেন’ ঝড়ে আরও বেশি সংক্রমণের আশঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজ়িজ়ের’ প্রধান অ্যান্টনি ফসি-রও। সেনেটকে এ নিয়ে মতামত দেওয়ার আগে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘অর্থনীতি সচল করতে গিয়ে বিধিনিষেধ শিকেয় উঠলে শুধু সংক্রমণ আর মৃত্যুই বাড়বে না, আসল লড়াইটা থেকেই পিছিয়ে যাব।’’ সংক্রমণ ও করোনা-মৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে আমেরিকাই। আক্রান্ত ১৪ লক্ষ ছুঁইছুঁই। মৃত প্রায় ৮৩ হাজার।
প্রেসিডেন্ট যথাসময়ে পদক্ষেপ করলে সংখ্যাটা অর্ধেক হত বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প-বিরোধী মার্কিন চলচ্চিত্রকার উজেন জেরেকি। শুক্রবার তিনি টাইমস স্কোয়ারের ছাদে প্রায় ৫৬ ফুটের বিলবোর্ডে বসিয়েছেন ‘ট্রাম্প ডেথ ক্লক’। রোজ তিনি আপডেট দিচ্ছেন শুধু ‘ট্রাম্পের গাফিলতিতেই’ মৃতের পরিসংখ্যান। গতকাল দেখা গিয়েছিল জ্বলজ্বল করছে ৪৮,০০০!
ট্রাম্প এ দিকে গত কালই করোনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে বচসার জেরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কেন ট্রাম্প দাবি করছেন, পরীক্ষার বিষয়টিতে অন্য দেশের তুলনায় আমেরিকা ভাল কাজ করছে? তা-ও এমন এক সময়ে, যখন মৃত্যুমিছিল অব্যাহত! পাল্টা ট্রাম্প জানান, সারা বিশ্বেই মানুষ মারা যাচ্ছেন। প্রশ্নটা বরং চিনকে করা উচিত। চিনা বংশোদ্ভূত ওই সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, তাঁর উদ্দেশেই কি প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য? ট্রাম্প জানান, এমন প্রশ্ন যিনিই করুন, তার এমনই জবাব হয়। পরে এক মহিলা সাংবাদিকের প্রশ্নের মাঝেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান ট্রাম্প।
গোটা বিশ্বেই আক্রান্ত বাড়ছে। কোন দেশ প্রতিষেধক তৈরির কাজে কতটা এগোলো, সে দিকে নজর সবার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিছুটা ‘ভয়’ দেখিয়েও জানালেন, অক্সফোর্ডের পাশাপাশি প্রতিষেধক তৈরির কাজে এগোচ্ছে লন্ডনের ইম্পেরিয়েল কলেজও। বাল্টিমোরের কাছে মাঝারি মাপের একটি প্ল্যান্টে যেমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসনও। এখন কেউ যদি প্রতিষেধক তৈরি করেও ফেলে, বিশ্বে তা একই সময়ে জোগান দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিশ্ববাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শই দিচ্ছেন তাঁরা।