করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে চিনের একটি হাসপাতালে। —ফাইল চিত্র
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছেই। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশেই এখনও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের পথে হাঁটছে একের পর এক দেশ। তার মধ্যেই কিছুটা স্বস্তির খবর দিল চিন। যে হুবেই প্রদেশ থেকেই করোনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, সেখানে আগামিকাল বুধবার থেকে উঠে যাচ্ছে লকডাউন। কাল থেকেই বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবেন বাসিন্দারা। চালু হচ্ছে যানবাহনও। তবে করোনার আতুড়ঘর বলে চিহ্নিত উহান শহরকে এই নির্দেশিকার আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। সেখানে নিয়ন্ত্রণ উঠবে ৮ এপ্রিল থেকে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই হুবেই প্রদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তার পর সেখান থেকে গোটা হুবেই রাজ্য হয়ে চিনের প্রায় সর্বত্র এবং গোটা বিশ্বের ১৯০টি ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উহান-সহ হুবেই প্রদেশ জুড়ে লকডাউন জারি হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি। তার প্রায় দু’মাস পরে সেই ঘরবন্দির নির্দেশ তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে মঙ্গলবার হুবেই রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
চিন সরকারি ভাবে দাবি করেছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। দেশীয় কোনও ব্যক্তি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন, এমন কোনও রিপোর্ট নেই। অল্প সংখ্যক যে নতুন সংক্রমণ নিশ্চিত হচ্ছে, তাঁদের বিদেশে ভ্রমণ বা বিদেশিদের সংস্পর্শে আসার নজির রয়েছে। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে বেজিং।
যদিও করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের যে দাবি শি চিনফিং প্রশাসন করছে, সে দেশের অভ্যন্তরেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, নতুন করে কার্যত কারও করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা হচ্ছে না। এমনকি, সংক্রমণের লক্ষ্মণ নিয়ে গেলেও ফিরিয়ে দিচ্ছে অধিকাংশ হাসপাতাল। আবার নতুন সংক্রমণের যে তথ্য, সরকারি ভাবে দেওয়া হচ্ছে, তা অনেকটাই প্রভাবিত। সেই সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানে অনেক কম করে দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
আরও পড়ুন: ৩১ মার্চ পর্যন্ত গোটা রাজ্যেই লকডাউন, ঘোষণা মমতার
কিন্তু সে সব উড়িয়ে মঙ্গলবার লকডাউনের নির্দেশ তুলে নিয়ে হুবেই প্রশাসন জানিয়েছে, বাসিন্দারা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবেন। হুবেই প্রদেশের বাইরে যাতায়াত করতে পারবেন। একই ভাবে অন্য এলাকা থেকেও হুবেইয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। ট্রাফিক নিয়ম মেনে যানবাহন চলাচলেও আর কোনও বাধা থাকবে না। তবে বাইরে বেরোলে থাকতে হবে ‘গ্রিন কোড’। একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিয়ে এই ‘গ্রিন কোড’ পাওয়ার বন্দোবস্ত চালু করেছে চিনের প্রশাসন। সেই কোড সঙ্গে থাকলে যাতায়াতে আর কোনও বাধা থাকবে না। যদিও অ্যাপের মাধ্যমে সেই ‘গ্রিন কোড’ দেওয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন না মানলে প্রয়োজনে কার্ফু জারি করার পরামর্শ রাজ্যকে
প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু হয়েছিল শনিবার থেকেই। ওই দিন একটি বিশেষ ট্রেনে অন্যান্য রাজ্য থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রায় ১০০০ কর্মীকে হুবেই প্রদেশে আনা হয়েছে। সোমবার থেকে তাঁরা কাজেও যোগ দিয়েছেন। পাশপাশি সোমবার বাসিন্দাদের অনেককেও ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন তাতে বাধা দেয়নি। ২৩ জানুয়ারি লকডাউনের পর থেকে এমন ছবি দেখেনি উহান।