ফাইল চিত্র।
লকডাউন তুলে দিয়েছে ব্রিটেন। দীর্ঘ কয়েক মাস ঘরবন্দি থাকার পরে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়াতে পেরেছিলেন বাসিন্দারা। কিছু বিধিনিষেধ জারি রয়েছে এখনও। ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার কথা তা-ও। শেষে ২১ জুন সম্পূর্ণ ‘স্বাধীনতা’। এমনটাই পরিকল্পনা ছিল বরিস জনসন সরকারের। কিন্তু ফের হয়তো বন্দিদশায় ফিরতে হতে পারে, এমনই ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জানালেন, ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, করোনাবিধি জারি না-থাকলে পরিণতি ‘ভয়ানক’ হতে পারে।
ব্রিটেন স্ট্রেন নিয়ে আতঙ্ক কাটতে না-কাটতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অতিসংক্রামক ভারতীয় স্ট্রেন। বিশেষ করে লন্ডনে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করছেন দেশবাসীর একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সঠিক সময়ে বন্ধ না-করার জন্যই এই অবস্থা। গত কাল সন্ধ্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠকে বরিস বলেন, স্ট্রেনটি যদি সত্যিই ভয়ের কারণ হয়, তা হলে হয়তো ফের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
এই মুহূর্তে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতির সামলানোর চেষ্টা করছে ব্রিটেন। লক্ষ্য, যে করেই ভারতীয় স্ট্রেনের গতিবিধি রুখে দিতে হবে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এর সংক্রমণ ক্ষমতা অন্যদের প্রায় তিন গুণ। পাবলিক হেল্থ ইংল্যান্ড (পিএইচই) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ৫২০ জন সংক্রমিত ছিলেন ভারতীয় স্ট্রেনে। এক সপ্তাহে সেই সংখ্যা বেড়ে ১৩১৩ হয়েছে। উত্তর ইংল্যান্ডের বল্টন এবং ব্ল্যাকবার্নে ভারতীয় স্ট্রেনে সংক্রমিত সবচেয়ে বেশি। সেনা নামানো হয়েছে এখানে। তারা ঘরে ঘরে টেস্ট কিট বিতরণ করছেন। বাসিন্দাদের আবেদন জানানো হচ্ছে, বাড়িতে বসেই পরীক্ষা করুন। টিকাকরণের গতিও বাড়ানো হয়েছে এই সব এলাকায়। দিনে আরও বেশি সময় খোলা থাকছে টিকাকরণ কেন্দ্র। টিকা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে একটি ভ্যাকসিন বাস তৈরি করা হয়েছে। ১০০ জন নার্স, জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একটি ‘দ্রুত সাহায্যকারী দল’ তৈরি করা হয়েছে। আগে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হচ্ছিল। সেটা কমিয়ে ৮ সপ্তাহ করা হয়েছে। ৫০-এর ঊর্ধ্বে ও অসুস্থদের জন্য এই ব্যবস্থা। বর্তমানে ৩৮ বছরের ঊর্ধ্বে টিকাকরণ চলছে ইংল্যান্ডে।
বল্টন, ব্ল্যাকবার্ন ছাড়াও লন্ডন, সেফটন, নটিংহ্যামের ১৫টি এলাকায় ব্যাপক ভাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারি আধিকারিকদের বক্তব্য, যত বেশি টেস্ট হবে, তত বেশি সংক্রমণ নজরবন্দি করা সম্ভব হবে।
ব্রিটেনে সংক্রমণ ও মৃত্যু একেবারেই কমে গিয়েছিল। কাল সরকারি ঘোষণায় জানা গিয়েছে, গত ২৮ দিনে ১৭ জন মারা গিয়েছে। ২১৯৩টি করোনা-পজ়িটিভ ধরা পড়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় স্ট্রেনে আক্রান্ত। ১২ মে পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভ্যারিয়্যান্টে।
সরকারের এখন চিন্তার কারণ, অল্পবয়সিরা। ৩৮ বছরের নীচে কেউ টিকা পাননি। ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টে অল্পবয়সিদের আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই বেশি। এ দিকে, ২১ জুন থেকে সমস্ত কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে এ পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিধি হালকা করা হচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে, স্বাধীনতার রোডম্যাপ। ১৭ মে-ও কিছু বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি থেকে পিছিয়ে আসার কথা এখনও জানাননি বরিস জনসন।
তবে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রয়োজনে লকডাউন জারি রাখতে হবে। জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, সমস্ত বরবাদ হতে পারে একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
এই মিউট্যান্ট স্ট্রেন প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস বলেছেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, প্রথম বছরের তুলনায় অতিমারি আরও বেশি প্রাণঘাতী হতে চলেছে দ্বিতীয় বছরে।’’