India

Indo Bangladesh Relation: পরিবেশ রক্ষায় দুই বাংলায় সমন্বয়ের ডাক

আন্তঃসরকারি সম্মেলনে আবহাওয়ার রদবদলে ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত বঙ্গীয় বদ্বীপ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা উঠে আসে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২২ ০৭:২৭
Share:

ফাইল চিত্র।

স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ঢক্কা নিনাদে চাপা পড়ে গিয়েছে তাদের কথা। স্বাধীনতা, দেশভাগের রাজনৈতিক, সামাজিক অভিঘাত নিয়ে তাও চর্চা হয়। কিন্তু নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্রে দেশভাগের প্রভাব নিয়ে কার্যত তাপউত্তাপ নেই।

Advertisement

অথচ গ্লাসগোয় গত বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু ক্রমপরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি সম্মেলনে আবহাওয়ার রদবদলে ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত বঙ্গীয় বদ্বীপ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা উঠে আসে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের স্রোত ও পলিতে পুষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম এই বদ্বীপে আগামী ৫০ বছরেই বড় বিপদ আসতে পারে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদদের মতে, এ গ্রহের বিপন্নতম অঞ্চলগুলির অন্যতম কলকাতা-সংলগ্ন এই এলাকা। “আসন্ন বিপদে একযোগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সচেতনতা বিস্তার এবং সমন্বয় তৈরি ছাড়া গতি নেই”, এই সার বুঝে একযোগে দু’দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণায় শামিল ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলবিদ, শিক্ষক মেহেবুব সাহানা। ৩২ বছরের যুবক বর্ধমানের খণ্ডঘোষের দামোদরের চরের দেশের ছেলে। ইংল্যান্ডের লিভারহুম ইনস্টিটিউটের মর্যাদাপূর্ণ ‘আর্লি কেরিয়র ফেলোশিপ’ পেয়ে পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্রে বাংলা ভাগের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় তিনি শামিল হয়েছেন।

পৌনে চার কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্পটি তিন বছরে শেষ করতে চান মেহেবুব। উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে দুই বাংলার নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ নিয়ে গবেষণাও খণ্ডিত। নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে ভারত, বাংলাদেশ চিন্তিত। কিন্তু নদীর সার্বিক অবস্থা নিয়ে গবেষণায় মন নেই। শিল্পের দূষণে পরিবেশ তথা জল, বায়ুর সঙ্কটে দু’দেশের টনক নড়তেও বিস্তর দেরি হয়েছে।’’ একই আক্ষেপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য তথা ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের। তাঁর কথায়, “ভারতে বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যেও নদীর জল নিয়ে মতবিরোধ আছে। ভারত, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বিরোধে সমাধান সূত্র আরও জটিল। বাঁধ নির্মাণের মতো মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে প্রকৃতি জনজীবনে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পড়ছে।”

Advertisement

বাঙালির কাব্যে শীতললক্ষ্যা ও ময়ূরাক্ষী, ভৈরব বা রূপনারায়ণ একাকার। ইদ, দুর্গোৎসব, সম্প্রীতিতে দুই বাংলাকে মেলাতে আবেগের ছড়াছড়ি। তবু প্রাকৃতিক সঙ্কটের সামনে যৌথতা গরহাজির। এই দিকগুলি মাথায় রেখেই তাঁর গবেষণার রূপরেখাটি সাজিয়েছেন মেহেবুব। বর্ধমান ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রের কথায়, “নদীর কোল দখল করে উদ্বাস্তুদের জনবসতির জন্য বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে। বাঁধ নির্মাণে জলের মাছ বা পলি দুটোই বিপন্ন। জনবসতির জেরে বা নদী জলে পলির অভাবে সুন্দরবনের বাদাবনের (ম্যানগ্রোভ) দুরবস্থা। তাতে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ বাড়ছে। সীমান্তের কাঁটাতারে বাঘের বসবাসেও সমস্যা হচ্ছে। সুন্দরবনের বিষয়ে তো দুই দেশের যৌথ দফতর থাকা উচিত ছিল।” একই ভাবে ফরাক্কার বাঁধের দরুন ইলিশের গতিপথ রুদ্ধ হয়েছে। দেশভাগোত্তর দুই বাংলায় সমাজ, সংস্কৃতিতে পরিবেশগত রদবদলের ছাপগুলি নিয়ে মেহেবুব কাজ করছেন।

গবেষণা প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাঞ্চেস্টার আরবান ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জো র‌্যাভেৎজ় দীর্ঘদিন জলবায়ু পরিবর্তনের ভ্রূকুটিতে কলকাতা, চেন্নাই-সহ দেশ-বিদেশের শতাধিক শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণায় জড়িয়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দিষ্ট করা উন্নয়নের সুস্থায়ী লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। র‌্যাভেৎজ় মনে করেন, ‘‘তিন বছরের স্বল্প সময়ে এমন বিস্তৃত গবেষণায় দুই বাংলার বদ্বীপের কয়েকটি নির্দিষ্ট কেস-স্টাডি ধরে মেহেবুবের এগোনো উচিত। বঙ্গীয় বদ্বীপের বিপুল সংখ্যক জীবন সুরক্ষার পথ নির্দেশ দিতেই কাজটি জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement