ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। —ফাইল চিত্র।
সালটা ২০২০। গোটা বিশ্ব তখন পুরোমাত্রায় কোভিড-আক্রান্ত। সে সময় ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন অধুনা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ওই করোনাকালে দেশে দ্বিতীয় বার লকডাউনের তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনি। লকডাউনের বিরুদ্ধে তাঁর মনোভাব এতটাই কড়া ছিল যে, সুনক মনে করতেন কঠোর কোভিড বিধি-নিষেধ জারির থেকে দেশের মানুষের মৃত্যুই শ্রেয়। তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘‘মানুষকে মরতে দিন।’’ দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সেই মন্তব্য ঘিরে আপাতত তোলপাড় ব্রিটিশ রাজনীতি। প্রসঙ্গত, দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই অতিমারিতে ব্রিটেনে প্রাণহানির সংখ্যা ২ লক্ষেরও বেশি।
অতিমারিকাল ব্রিটিশ সরকার কী ভাবে সামলেছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তাতেই সুনকের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। অতিমারি চলাকালীন ব্রিটেনের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন প্যাট্রিক ভ্যালেন্স। সেই সময়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের রোজকার কোভিড সংক্রান্ত সাংবাদিক বৈঠকে ভ্যালেন্স ছিলেন পরিচিত মুখ। অতিমারি চলাকালীন সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন তিনি। কোভিড-তদন্তে তাঁর লেখা সেই ডায়েরিই এখন প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। যদিও ভ্যালেন্স জানিয়েছিলেন, নিজের কাজের চাপ কিছুটা কমাতেই প্রতিদিনের সরকারি কার্যকলাপ লিখে রাখতেন তিনি। সেই লেখা ছাপা হোক তা কখনওই চাননি তিনি।
মাত্র দু’দিন আগেই ভ্যালেন্সের ওই ডায়েরির একটি লেখা থেকেই জানা গিয়েছিল, কোভিড অতিমারির চলাকালীন অনেক সময়েই বৈজ্ঞানিক তথ্য বুঝে উঠতে পারতেন না তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ভ্যালেন্স নিজে ৪ মে, ২০২০-তে এ নিয়ে লিখেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পুরো হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছেন।’’ এর মধ্যেই সুনকের এই মন্তব্য বিতর্কে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
ভ্যালেন্সের ডায়েরিতে দিনটা লেখা রয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা ডায়েরিতে উল্লেখ করেছিলেন ভ্যালেন্স। সেখানেই লিখেছেন, বরিসের বিশেষ উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস তাঁকে সেই সময়ে জানিয়েছিলেন দ্বিতীয় দফায় কোনও ভাবেই ব্রিটেনে লকডাউন চান না সুনক। উল্টে তিনি কামিংসকে বলেছিলেন, ‘মানুষকে মরতে দিন’ (জাস্ট লেট পিপল ডাই)। সুনকের যুক্তি ছিল, আরও এক বার লকডাউন করলে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।
ওই একই সময়ে কড়া কোভিড বিধি জারির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ভ্যালেন্স। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাইরে মেলামেশা বন্ধ রাখার পক্ষে ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, তাঁর পরামর্শের তোয়াক্কা না করেই ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ প্রকল্প চালু করেন সুনক। প্রথম দফা লকডাউনে ধসে পড়া ব্রিটিশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বাইরের হোটেল-রেস্তরাঁয় খাওয়ার বিষয়ে ব্রিটেনের মানুষকে উৎসাহিত করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। বলা হয়েছিল, খাবারের বিল যা হবে, তার অর্ধেক খরচ মেটাতে হবে জনগণকে। সেই নির্দিষ্ট রেস্তরাঁকে বাকি অর্ধেক বিল দেবে ব্রিটিশ সরকার। ভ্যালেন্সের অভিযোগ ছিল, এই ধরনের ‘খামখেয়ালি’ নীতি চালুর জন্য প্রচুর সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় ব্রিটেনে। সুনক অবশ্য এই অভিযোগ ওঠার পরে জানিয়েছিলেন যে, সরকারি নীতি নিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে এ নিয়ে কেউ আপত্তিই তোলেনি। আর ভ্যালেন্স বলেছেন, ‘‘ওই নতুন প্রকল্প নিয়ে সরকারের কোনও মন্ত্রী আমার সঙ্গে তখন আলোচনা করেননি বা পরামর্শ নেননি। তাই বিরোধিতার প্রশ্নই উঠছে না। আগে থেকে জানলে প্রথমেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করতাম। কারণ জানতাম এর ফলে ভয়ানক ভাবে সংক্রমণ ছড়াতে চলেছে।’’