Rishi Sunak

সুনক-পত্নী গোয়া সফরে, ক্ষোভের আগুন ব্রিটেনে

ব্রিটিশ রাজনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো গোয়া ভ্রমণ ততটা বিলাসবহুল না হলেও অক্ষতার এই সফর চোখ টেনেছে অনেকেরই।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩২
Share:

পরিবারের কারণে আরও এক বার বিতর্কের মুখে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ফাইল ছবি।

নানা সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য শিরোনামে থেকেছেন তিনি। তাঁর সরকারের সাম্প্রতিক আয়কর নীতির জন্য দেশের সাধারণ মানুষ আপাতত চরম ক্ষুব্ধ তাঁর উপরে। তবে এ বার তিনি নিজে নন, পরিবারের কারণে আরও এক বার বিতর্কের মুখে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি গোয়া গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। তা নিয়ে ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম প্রধানমন্ত্রী-পত্নীর তুমুল সমালোচনা করেছে। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে এখন জর্জরিত ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ। এই সময়ে অক্ষতার গোয়া সফরের খবর ও ছবি দেখে চরম অসন্তুষ্ট দেশবাসীর একটা বড় অংশ।

Advertisement

ব্রিটেনে এখন সব স্কুলে ছুটি চলছে। সেই সুযোগে দুই মেয়ে কৃষ্ণা (১১) আর অনুষ্কাকে (৯) নিয়ে প্রথমে বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা। সেখান থেকেই মা সুধা মূর্তি ও দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গোয়া বেড়াতে যান সুনক-পত্নী। তাঁদের গোয়া সফরের ছবি ও খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরেই ভাইরাল। বিভিন্ন জলক্রীড়াতেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের।

আজ ব্রিটেনের একটি প্রথম সারির দৈনিক অক্ষতার সেই গোয়া সফর নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। তাদের বক্তব্য, এক দিকে, সুনকের নির্বাচনী কেন্দ্র ইয়র্কশায়ারে তাপমাত্রার পারদ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কারণে ঘরে হিটার জ্বালাতে পারছেন না সেখানকার অধিকাংশ মানুষ। ঠিক সেই সময়েই দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সপ্তাহে সাত হাজার পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাত লক্ষ টাকা) খরচ করে পরিবারের লোক জনের সঙ্গে গোয়া গিয়ে সমুদ্রের উষ্ণতা উপভোগ করছেন।

Advertisement

ব্রিটিশ রাজনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো গোয়া ভ্রমণ ততটা বিলাসবহুল না হলেও অক্ষতার এই সফর চোখ টেনেছে অনেকেরই। ব্রিটিশ সরকারের বেশ কিছু নীতি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের মনে আগে থেকেই নানা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। যেমন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে হওয়া অতিরিক্ত মুনাফা (ট্যাক্স উইন্ডফল) শক্তি সংস্থাগুলির কাছ থেকে নিতে অস্বীকার করেছে ব্রিটিশ সরকার। উল্টো দিকে, বিদ্যুতের অতিরিক্ত দামের কারণে প্রবল ঠান্ডাতেও হিটার জ্বালাতে পারছেন না ব্রিটেনের অন্তত ৬০ লক্ষ মানুষ। প্রায় ৪০ লক্ষশিশু এখন দেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছে, রোজকার খাবার ঠিকমতো পাচ্ছে না তারা। তার মধ্যেই অক্ষতার এই সফর সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘি ঢেলেছে।

অবশ্য শুধু সাধারণ মানুষই নন, সুনক সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারীদের একটা বড় অংশও। গত কয়েক মাসে নানা ক্ষেত্রে তাঁদের ডাকা ধর্মঘটে দৈনন্দিন সরকারি কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। গত ডিসেম্বর মাস জুড়ে রেলওয়ে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, ডাকঘর, প্যারা মেডিক্যাল ওজরুরি বিভাগের কর্মীরা ধর্মঘট ডেকেছিলেন। এ মাসে আরও একবার ধর্মঘটে বসতে চলেছেন নার্সেরা। চলতি মাসেই পূর্ত দফতরের কর্মীরা বৃহত্তম কর্মবিরতি আন্দোলনশুরু করেছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে চড়চড় করে বাড়ছে বিরোধী লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা। পার্টির এক নেতা তথা এমপি জাস্টিন ম্যাডারস যেমন বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর সমুদ্রে সময় কাটানো আর ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের ফারাকটা এখন বড্ড বেশি স্পষ্ট।’’ সুনক-ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য অনেকেই বলছেন, ভারতে এসে মা সুধা মূর্তির সঙ্গে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সেখানকার পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন অক্ষতা। সুধার নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সেগুলির প্রচার না করায় হতাশ তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement