কোকেন হাঙর! ছবি: সংগৃহীত।
ব্রাজ়িলের উপকূল ঘেঁষে সাঁতরে বেড়াচ্ছে ‘কোকেন হাঙর’! কোকেনের নেশায় বুঁদ এই হাঙরদের আচরণও নাকি স্বাভাবিকের থেকে আলাদা। সম্প্রতি ১৩ টি ব্রাজ়িলিয়ান ‘শার্প নোজ়’ হাঙরের উপর একটি পরীক্ষায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে!
এর আগে ব্রাজ়িলের রিও দি জেনেইরোর সৈকতের কাছাকাছি অঞ্চলের হাঙরদের উপর একটি সমীক্ষায় তাদের পেশি ও যকৃতে অত্যধিক মাত্রায় কোকেনের সন্ধান মিলেছিল। এর পরই নড়েচড়ে বসেছেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রের মাঝে হাঙররা কোকেনের নাগালই বা পেল কোথা থেকে, এ সব প্রশ্নই ভাবাচ্ছে তাঁদের। অনেকের মতে, মাদক তৈরির বেআইনি পরীক্ষাগারগুলি থেকেই এই পরিমাণ মাদক জলে এসে মিশেছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, মাদকাসক্তদের রেচনপদার্থ ও বর্জ্য সমুদ্রে এসে মিশলেও এমন হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হল, দশকের পর দশক ধরে বাজেয়াপ্ত করা মাদক ফেলে দেওয়া হচ্ছে সমুদ্রে। কখনও বা চোরাপাচারকারীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে জলে ফেলে দিচ্ছে মাদকভর্তি বস্তা। মেক্সিকো ও ফ্লোরিডা উপকূলে প্রায়ই এ রকম হয়ে থাকে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু ২০২৩ সালেই ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রায় ৬,৪০০ কেজি কোকেন উদ্ধার করেছিল আমেরিকান উপকূলরক্ষী বাহিনী। বারবার এই বিপুল পরিমাণ মাদক সমুদ্রে মেশার ফলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র।
কিছু বছর আগে ডিসকভারি চ্যানেলের সৌজন্যে প্রথম এই ‘কোকেন হাঙর’দের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। তার পর থেকেই নানা পরীক্ষার মাধ্যমে ওই হাঙরদের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাঙরদের উপর কোকেনের মতো ক্ষতিকর মাদকের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়ে যায়। তবে কোকেন তাদের আচরণকে ঠিক কত মাত্রায় প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, বা এতে হাঙরগুলি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে কি না, সে সব তথ্য এখনও জানা যায়নি। তবে কোকেন যেহেতু অন্যান্য প্রাণীদের মস্তিষ্ককে অতিমাত্রায় সক্রিয় করে তোলে, তাই হাঙরদের উপরেও তার প্রভাব থাকতে বাধ্য— এমনটাই বি়জ্ঞানীদের অনুমান। ব্রাজ়িলের রিওর উপকূল অঞ্চলে যে হাঙরগুলির উপর সমীক্ষাটি করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের শরীরে অত্যধিক মাত্রায় কোকেন পাওয়া গিয়েছে, যা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর দেহে পাওয়া কোকেনের মাত্রার তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি। এর পর থেকেই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের কথা ভেবে শঙ্কিত জীববিজ্ঞানীরা।