চেন কুইশি। চিনা সাংবাদিক। ছবি সৌজন্য টুইটার।
করোনাভাইরাস হানা দিতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে চিন প্রশাসনের রোষের মুখে পড়েছিলেন লি ওয়েংলিয়ান নামে উহানের এক চিকিত্সক। পরে করোনায় মৃত্যু হয় সেই চিকিত্সকরেই। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই জনরোষ তৈরি হয়। এ বার সেই উহানেরই খবর করে নিখোঁজ হয়ে গেলেন চেন কুইশি নামে এক সাংবাদিক। একবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন তাঁরই সঙ্গে থাকা আরও এক সাংবাদিক ফ্যাং বিন। চিকিত্সকের ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন চিনের নাগরিকরা। এ বার সাংবাদিকের নিখোঁজ হওয়া সেই ক্ষোভকে আরও বাড়াল।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে উহানের প্রতি মুহূর্তের খবর, শহরের কোথায় কী ঘটছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চেন ও ফ্যাং তুলে ধরেছিলেন গোটা বিশ্বের কাছে। শুধু তাই নয়, উহানের আক্রান্তদের ভয়াবহ পরিস্থিতি, সেই সঙ্গে বাস্তব চিত্রটাও সামনে এনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান চেন। করোনাভাইরাসের খবর করা এক জন সাংবাদিকের হঠাত্ উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ফ্যাং-ই বা কেন চুপ করে গেলেন?
গত শুক্রবারই এক চিকিত্সকের মৃত্যু সামনে আসার পর বিক্ষোভ ছড়িয়েছে চিনের অন্দরে। লি ওয়েনলিয়াং নামে ওই চিকিত্সক উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অনেক আগেই। কিন্তু প্রশাসন বেমালুম বিষয়টি চেপে যায় বলে অভিযোগ। ভুয়ো খবর ছ়ড়ানোর অভিযোগ তুলে ওয়েংলিয়াংকে শাস্তিও দেওয়া হয়। চেন-এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবরটি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, উহানের বাস্তব চিত্র সামনে আনার জন্যই কি চেন-কে ওয়েনলিয়াংয়ের মতো প্রশাসনের রোষে পড়তে হল?
আরও পড়ুন: আক্রান্ত আরও ৬, ভয় বিনয়ের জাহাজে
আরও পড়ুন: ‘জাতপাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর ধর্মের রাজনীতি’, বিস্ফোরক প্রীতীশ নন্দী
গত ২৪ জানুয়ারি থেকে উহান এবং তার পার্শ্ববর্তী শহরগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছিলেন চেন ও ফ্যাং। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও বলেন। তার পর সেই ছবি, ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। এর জন্য তাঁকে প্রশাসনের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন চেন। একটি ভিডিয়োতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, এই প্রথম আমার প্রচণ্ড ভয় করছে। আমার সামনে ভয়ানক রোগ, পিছনে চিন প্রশাসন। কিন্তু যত দিন জীবিত থাকব, যা দেখেছি সেটাই বলব। মরতে ভয় পাই না।” তার পর পরই নিখোঁজ হয়ে যান চেন। আশঙ্কাটা শেষমেশ সত্যিই হল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর চেনের পরিবার ও বন্ধুরা জানতে পারেন, তাঁকে নাকি কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। এমনটাই দাবি চেনের আত্মীয়স্বজনদের। তাঁদের অভিযোগ, কোয়ারেন্টাইনের নামে চেনকে আটক করে রেখেছে প্রশাসন।
চেন পেশায় এক জন আইনজীবী। কিন্তু সাংবাদিকতার নেশাও রয়েছে তাঁর। সিটিজেন জার্নালিস্ট হিসেবে ২০০৯-এ গানঝৌ-এর বন্যার রিপোর্টিং করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি হংকংয়েও গিয়েছিলেন সেখানকার জন-আন্দোলনের বাস্তব চিত্রটাকে তুলে ধরতে। উহানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান পরিস্থিতি চাক্ষুষ করতে। বাস্তব চিত্রটাকে তুলে ধরেন।
করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যেই চিনে মারা গিয়েছেন ৯০০-র বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ হাজার। রবিবারই ৯৭ জনের মৃত্যু হয়। ৩ হাজার জন নতুন করে আক্রান্ত হন। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মৃত ৯৭ জনের মধ্যে ৯১ জনই হুবেই প্রদেশের। বাকি মৃত্যু হয়েছে হাইনান, গানসু, জিয়াংজি, আনহুই প্রদেশে।