প্রতীকী ছবি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক মেজাজের জেরে কি রং বদলাতে শুরু করল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি? দ্রুত বাড়তে শুরু করল উত্তাপ? চিনের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের খবর প্রকাশ্যে আসার পর কিন্তু তেমনই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের একাংশ। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ডংফেং-৫সি-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে চিন। শুধু ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছে এমন নয়। একসঙ্গে ১০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্র নিয়ে সেটি উড়তে সক্ষম কি না এবং একসঙ্গে ১০টি আলাদা আলাদা লক্ষ্যে সেটি আঘাত হানতে সক্ষম কি না, সাম্প্রতিকতম উৎক্ষেপণে সেই পরীক্ষাই করেছে চিন।
চিনের সামরিক কার্যকলাপের উপর সব সময়ই সতর্ক নজর রাখে আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনে চিনের সামরিক গতিবিধির বিশদ বিবরণ থাকে। সেই পেন্টাগন সূত্রেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে চিনের এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকেই এই উৎক্ষেপণটি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিনের পূর্বাঞ্চলের শাংসি প্রদেশের তাইয়ুয়ান থেকে ডংফেং-৫সি মিসাইলটিকে ছোড়া হয়। মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল বা এমআইআরভি ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা পেন্টাগনকে জানিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় এমআইআরভি থাকলে এক সঙ্গে অনেকগুলি আলাদা আলাদা লক্ষ্যে আঘাত হানা সম্ভব হয়। এমআইআরভি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ডংফেং-৫সি-এর মাথায় ১০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড জুড়ে দেওয়ার অর্থ হল, এক সঙ্গে ১০টি আলাদা লক্ষ্যে পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম হবে ক্ষেপণাস্ত্রটি। তাইয়ুয়ান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রটি ১০টি ডামি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড নিয়ে পশ্চিম চিনের মরুভূমিতে আঘাত হেনেছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।
চিনের পরমাণু অস্ত্রাগারে বেড়েই চলেছে ডংফেং সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা। ছবি: সংগৃহীত।
ডংফেং-৫সি হল ডংফেং-৫ ক্ষেপণাস্ত্রেরই একটি নতুন সংস্করণ। ১৯৮০ সালেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ডংফেং-৫ চিনা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পরে এই ক্ষেপণাস্ত্রটিরই আরও নানা রকম সংস্করণ তৈরি করা শুরু হয়। ডংফেং-৫সি সাম্প্রতিকতম সংস্করণ।
দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা বিবাদ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমেরিকার সঙ্গে চিনের দড়া টানাটানি দীর্ঘ দিন ধরেই বাড়ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর আমেরিকার চিন নীতি আগের চেয়েও কড়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, চিন এখন যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে চাইছে। সেই কারণেই ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় ১০টি ডামি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড লাগিয়ে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছে।
চিনা সেনা কি চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে? প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলে। (প্রতীকী ছবি / সংগৃহীত)
চিন বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার মনে করছেন, এই উৎক্ষেপণের সঙ্গে ট্রাম্পের চিন নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘‘একটা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণের জন্য অনুমোদন নিতে হয় সর্বোচ্চ স্তর থেকে— সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের কাছ থেকে। অনুমোদন পেতে এবং উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিতে সেনাবাহিনীর অন্তত এক বছর সময় লাগে।’’ অর্থাৎ ২০১৭-র জানুয়ারি মাসে যে উৎক্ষেপণটি হয়েছে, ২০১৬-র জানুয়ারি থেকে তার প্রস্তুতি চলছিল বলে ওই বিশেষজ্ঞের দাবি। তখন ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। অতএব ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে এই উৎক্ষেপণের কোনও সম্পর্ক নেই বলে তিনি মনে করছেন। কিন্তু মার্কিন বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই উৎক্ষেপণ পূর্ব নির্ধারিত ছিল না। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিতস্তা-চন্দ্রভাগার জল আটকে ভারতের সুবিশাল প্রকল্প, আতঙ্কে পাকিস্তান
চিন নিজের পরমাণু অস্ত্রাগারে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের সংখ্যা বাড়াচ্ছে বলেও আমেরিকা এখন মনে করছে। পেন্টাগনের কাছে এত দিন হিসেব ছিল, চিনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ২৫০টি। কিন্তু যে ভাবে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় ১০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড জুড়ে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, তাতে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চুপিসাড়ে পরমাণু অস্ত্রাগার অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে বেজিং। আমেরিকা এ বিষয়ে আগেও অবশ্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। চিন যে ভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বাড়াচ্ছে এবং তাদের পরমাণু অস্ত্রাগার নিয়ে যে ধরনের অস্বচ্ছতা রয়েছে, তাতে এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে বলে আমেরিকা একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ডংফেং-৫সি-র সাম্প্রতিক উৎক্ষেপণের পর আমেরিকার সেই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে।