প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
এক দিকে চিন, অন্য দিকে কানাডা। ভারতের উপর ক্ষোভ আড়াল করল না দুই দেশই। চিনের রাগ, তাইওয়ানকে কেন আলাদা করে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে ভারত! কানাডা আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানালেও সে দেশের পার্লামেন্টরি প্যানেলের রিপোর্টে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপদ হিসেবে (চিনের পরেই) উল্লেখ করেছে ভারতের নাম!
গত বছর কানাডার সারে-তে খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যা ঘিরে দু’দেশের মধ্যে টানাপড়েনের শুরু। তখন থেকে নিজের দেশে ভারত-বিরোধিতায় কার্যত ‘নেতৃত্ব’ দিচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার অভিযোগ, সে দেশের মাটি ব্যবহার করে নিজ্জরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ভারতীয় গুপ্তচর বাহিনী। আজ সেই ট্রুডোই এক্স হ্যান্ডলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদীকে। ট্রুডোর দফতর থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন। কানাডা ও দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত— এই সম্পর্কের ভিত হবে মানবাধিকার, বৈচিত্র ও আইনের শাসন।’’ ঘটনাচক্রে এই সপ্তাহেই ট্রুডোর দফতরে সংসদীয় প্যানেলের যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘কানাডার গণতন্ত্রের জন্য স্পষ্টতই সবচেয়ে ক্ষতিকর হল চিন। কিন্তু রাশিয়াকে সরিয়ে এই মুহূর্তে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপদ হয়ে উঠছে কানাডার জন্য।’’ এই অবস্থায় ট্রুডোর বার্তায় ‘মানবাধিকার’ ও ‘আইনের শাসন’ শব্দের ব্যবহার নয়াদিল্লিকে খোঁচা মারার জন্যই বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ও দিকে, লোকসভা ভোটে জয়ের পরে মোদীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিল তাইওয়ান। জবাবে মোদীও সোশ্যাল মিডিয়ায় কুশল বিনিময় করেন। তাতেই চটেছে চিন। তাদের বক্তব্য, তাইওয়ান যে ‘রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ’ করছে, তার থেকে দূরে থাকুক ভারত।
চিনের দাবি, তাইওয়ান তাদেরই দেশের ‘বিদ্রোহী ভূখণ্ড’। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করেও তারা তাইওয়ানকে চিনের মূল ভূখণ্ডে যোগ করতে বদ্ধপরিকর। উল্টো দিকে, তাইওয়ান তাদের অবস্থানে অনড়। লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে মোদীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। গত মাসে লাই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘‘দ্রুত গতিতে তাইওয়ান-ভারত অংশীদারি বাড়ছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়ন বৃদ্ধিতে ব্যবসা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে চাই আমরা।’’ মোদী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘দু’দেশই উপকৃত হয়, এমন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি-বিষয়ক যুগ্ম প্রয়াসে করতে আগ্রহী ভারতও।’ এর পরেই চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘তাইওয়ান অঞ্চলের কোনও প্রেসিডেন্ট নেই।’’ নিং বলেছেন, ‘‘তাইওয়ান প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের কোনও প্রকার আলোচনার বিরোধিতা করে চিন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পৃথিবীতে একটাই চিন রয়েছে ও তাইওয়ান চিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’