তাইওয়ানে মহড়ার এই ছবি প্রকাশ করেছে চিন। পিটিআই
কথা ছিল তাইওয়ানকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে সামরিক মহড়া শেষ হয়ে যাবে রবিবারের মধ্যেই। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। আজ সকাল থেকেই তাইওয়ানের জল ও আকাশসীমার একেবারে কাছ দিয়ে নতুন উদ্যমে মহড়া চালাল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। চিনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড ঘোষণা করেছে, ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী ও সমুদ্রে প্রত্যাঘাত সংক্রান্ত তাদের এই যৌথ মহড়া আরও কয়েক দিন চলবে। যা দেখে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, তাইওয়ান ও আমেরিকার উপরে নিজেদের সামরিক চাপ বজায় রাখতে খুব সহজে তাইওয়ান প্রণালী ও তার সংলগ্ন এলাকা থেকে নড়বে না তারা।
এই মহড়া কত দিন চলবে, চিন তা স্পষ্ট করেনি। তবে সম্প্রতি তাইওয়ানের নির্দিষ্ট যে ছ’টি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ-সহ চিনের জোরদার সামরিক মহড়া চলছিল, সেখানকার আকাশসীমার উপরে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছে তাইপেই।
আজ সকালে মহড়া শুরুর পর চিনের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, এ ভাবে বারবার তাদের জল ও আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বেজিং। কিছু ক্ষণের মধ্যেই একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘তাইওয়ান তো আমাদের ভূখণ্ডেরই অংশ। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের জলসীমার মধ্যেই সামরিক মহড়া চালাচ্ছি। সেটাও খুব পেশাদারিত্বের সঙ্গে আর স্বচ্ছ ভাবে। এতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রশ্নই উঠছে না।’’
তবে চিন মুখে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার কথা বললেও তাদের এই কর্মকাণ্ডে প্রবল ক্ষুব্ধ তাইওয়ানের বন্ধু তথা সামরিক ক্ষেত্রে অন্যতম সঙ্গী আমেরিকা। হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের পর পরই আমেরিকার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহযোগিতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে আলোচনার যাবতীয় রাস্তা। চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র উ চিয়ান এক অনলাইন বার্তায় বলেছেন, ‘‘তাইওয়ান প্রণালীর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি একেবারেই আমেরিকার তৈরি করা। তাই এর ফলও আমেরিকাকেই ভুগতে হবে ও তার দায়ও তাদেরই নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।’’ হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত সপ্তাহে পেন্টাগনের কিছু শীর্ষ আধিকারিকের ফোন ধরেননি চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। তবে তার জন্য তাদের প্রতিরক্ষাসচিবের সঙ্গে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সম্পর্কে ভাঙন ধরবে না বলেই আশা করছে ওয়াশিংটন।
আজই চিনের মহড়া শুরুর কিছু আগেই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনসের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনজ়ালভেস তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে দেখা করেন। তাইওয়ানকে ঘিরে চিনের সামরিক মহড়ার নিন্দাও করেছেন গনজ়ালভেস। এই সঙ্কটের সময়ে তাঁদের পাশে থাকার জন্য গনজ়ালভেসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাই। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, পেলোসির সফরের আগে থেকেই গনজ়ালভেসের এই সফরের সূচি নির্ধারিত ছিল কি না। জবাবে সাই জানিয়েছেন, দু’দেশের সরকারের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি গোপনই রাখতে চান তাঁরা।