হাজার হাজার মসজিদ ভাঙার অভিযোগ চিনের বিরুদ্ধে।—ফাইল চিত্র।
সরকারি নির্দেশে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশেই শুধুমাত্র কয়েক হাজার মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। বলপূর্বক ধর্মীয় কাজকর্ম বন্ধ রাখার পাশাপাশি, সেখানে কয়েক লক্ষ মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন শিবিরে। অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই)-এর একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করা হয়েছে।
ক্যানবেরায় এএসপিআই-এর সদর দফতরটি অবস্থিত। সেটি সরকার প্রতিষ্ঠিত এবং অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমোদন প্রাপ্ত থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে এবং চিনা সরকারের নির্দেশে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমন দাবি করেছে তারা।
এএসপিআই জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে চিন সরকার। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু মসজিদ। অনেক মসজিদ আবার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে। শহুরে এলাকা উরুমকি এবং কাশগড়েই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর থেকে তিন দফায় ভোট বিহারে, ফলাফল ১০ নভেম্বর
এত কিছুর পরেও হাতে গোনা যে ক’টি মসজিদ দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই চূড়া এবং গম্বুজ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মসজিদ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। শিনজিয়াং প্রদেশে অক্ষত এবং ভগ্নপ্রায় অবস্থায় এই মুহূর্তে যে’কটি মসজিদ রয়েছে, তার সংখ্যা ১৫ হাজারের আশপাশে হবে।
এএসপিআইয়ের এই রিপোর্ট সত্য বলে প্রমাণিত হলে, ১৯৬০ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জেরে চিনে যে জাতীয়বাদী ভাবাবেগের উত্থান ঘটে, তার পর থেকে এই প্রথম সেখানে মসজিদের সংখ্যা এত নীচে গিয়ে ঠেকেছে।
তবে নির্বিচারে মসজিদ ভাঙা হলেও, শিনজিয়াং প্রদেশে কোনও গির্জা এবং বুদ্ধ মন্দিরের উপর একটি আঁচড়ও পড়েনি বলে দাবি করেছে এএসপিআই। বলা হয়েছে, শিনজিয়াংয়ে এত দিন যত মসজিদ, মাজার, কবরস্থান এবং ইসলামিক তীর্থযাত্রার পথ ছিল, তার তিন ভাগের এক ভাগ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কৃষি বিল নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, দাবি প্রধানমন্ত্রীর
শুধু তাই নয়, সবমিলিয়ে উইঘুর এবং তুর্কিক ভাষায় কথা বলা ১০ লক্ষের বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলেও জানি গিয়েছে ওই রিপোর্টে। বলপূর্বক সেখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
এর আগে, গত বছর সংবাদ সংস্থা এএফপি-র একটি তদন্তমূলক রিপোর্টেও এমনই তথ্য সামনে এসেছিল। তাতে বলা হয়, শিনজিয়াং প্রদেশে বহু কবরস্থান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে বহু মানুষকে।
তবে শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বেজিং। তাদের দাবি, শিনজিয়াং প্রদেশে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন সাধারণ মানুষ। এএসপিআই-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টটি নিয়েও একই দাবি করেছে তারা। শুক্রবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, ‘‘ওই রিপোর্টটির কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। চিনকে বদনাম করার জন্যই সেটি তৈরি করা হয়েছে।’’
এই মুহূর্তে শিনজিয়াং প্রদেশে ২৪ হাজার মসজিদ রয়েছে বলে দাবি করেন চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকায় মোট যত মসজিদ রয়েছে, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মসজিদ রয়েছে শিনজিয়াং প্রদেশে। এমনকি শিনজিয়াং প্রদেশে এক জন মুসলিম ব্যক্তি প্রতি গড়ে যত মসজিদ রয়েছে, মুসলিম দেশগুলিতেও তা নেই।’’
ডিটেনশন শিবিরে মুসলিমদের বন্দি করার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছে চিন। তাদের দাবি, উগ্রবাদী চিন্তাভাবনা দূর করতে এবং দারিদ্র কাটি উঠতে ওই শিবিরগুলিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।