শাংহাইয়ের বুদ্ধ মন্দিরে মাস্ক পরে প্রার্থনায়। ছবি: রয়টার্স।
হাসপাতালের আইসিইউ উপচে যাচ্ছে রোগীতে। শেষকৃত্যের স্থানে মৃতদেহ নিয়ে পরিজনদের লম্বা লাইন। যদিও চিন এত দিন ধরে বলে চলেছিল, দিনে মাত্র তিন-চার হাজার উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ। মৃত্যু নেই। চারপাশের পরিস্থিতি দেখে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিচ্ছে প্রায় সকলেই। বিশেষ করে সরকারি নথি ফাঁস হওয়ার পরে। যেখানে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই ২৫ কোটি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এ অবস্থায় আচমকাই বেজিং জানিয়েছে, তারা আর দৈনিক সংক্রমণের হিসেব প্রকাশ করবে না।
চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আজ ঘোষণা করেছে, রবিবার থেকে কোভিড-সংক্রমণ সংখ্যার মতো কোনও তথ্য তারা আর প্রকাশ করা হবে না। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য চিনের ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর তরফে জানানো হবে। তবে ‘প্রয়োজনীয় তথ্য’ বলতে তারা ঠিক কী বলতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা-ও জানানো হয়নি কোনও তরফেই।
দেশের কোভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর সরকার যতই চাপার চেষ্টা করুক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে বাস্তব পরিস্থিতি প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছেই। হাসপাতাল ভিড়ে উপচে যাচ্ছে। মর্গে দেহ রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। এমনই সব খবর ঘুরছে ইন্টারনেটে। এ-ও শোনা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন সামনের বছরে।
চিনের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের উপপ্রজাতি বিএফ.৭। সংক্রমণ ঢেউ নয়, সুনামি আছড়ে পড়েছে এ দেশে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাসের পর মাস লেগে যেতে পারে।
শাংহাইয়ের কাছে ঝেজিয়াং নামক শিল্পাঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। স্থানীয় প্রশাসনই জানিয়েছে, দিনে ১০ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন এখানে। আগামী দিনে যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।
এমন সব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেও আজ চিনের সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, শনিবার কোভিডের জেরে কোনও মৃত্যু হয়নি। এই নিয়ে টানা পাঁচ দিন জানানো হল, চিনের মূল ভূখণ্ডে করোনায় মৃত্যুর খবর নেই। ঝেজিয়াং-এর মতো হাতেগোণা কিছু অঞ্চলের প্রশাসন নিজেদের এলাকার সংক্রমণের খবর রাখছে ও জানাচ্ছে। উপসর্গহীন রোগীদেরও খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে তারা। ঝেজিয়াং প্রশাসনের তরফে আজ একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে— ‘‘এই অঞ্চলে অনুমানেরও আগে শীর্ষ ছোঁবে সংক্রমণের গ্রাফ। নতুন বছর শুরুর সময়ে সবচেয়ে কঠিন দশা হবে। এ সময়ে দৈনিক সংক্রমণ ২০ লক্ষ হয়ে যেতে পারে।’’ সংক্রমণের পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সম্পর্কেও যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করেছে এই অঞ্চলের প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ১৩,৫৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি। এক জন রোগীর উপসর্গ গুরুতর ছিল। ২৪২ জনের সংক্রমণ গুরুতর ও পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।
ঠিক এই রকম বিশদে তথ্য চিনের কাছ থেকে চেয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কিন্তু বেজিংয়ের তরফে কোনও সাড়াশব্দ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, এখনও তথ্য গোপন করে চলেছে চিন। যা আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে।