দলাই লামা। —ফাইল চিত্র।
ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসিত তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে আমেরিকার মাটিতে বৈঠক করলেন হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধিরা। নিউ ইয়র্কের ওই বৈঠকে বৃহস্পতিবার হাজির ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের বিদেশ দফতরের কয়েক জন আধিকারিকও। চিনের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতেই আমেরিকার এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। দলাইয়ের নিউ ইয়র্ক সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক কমিউনিস্ট পার্টি।
৮৯ বছরের দলাই লামার আমেরিকা সফর নিয়ে আগেই আপত্তি তুলেছিল চিন। কিন্তু বাইডেন সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের পর আবার দলাই আমেরিকা সফরে গেলেন। তবে এর মধ্যে একাধিক বার ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। দু’মাস আগে আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি-সহ সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বৈঠক করেছিলেন তিব্বতি ধর্মগুরুর সঙ্গে। তার আগে গত বছরের জুলাই মাসে আমেরিকার বিদেশ দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি উজ়রা জ়েয়া ভারত সফরে এসে দিল্লিতে দলাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। দু’বারই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল চিন।
উজ়রা বৃহস্পতিবারও নিউ ইয়র্কের বৈঠকে হাজির ছিলেন। ছিলেন, হোয়াইট হাউসের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান কেলি রাজুক। প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সাল থেকে চিনা ফৌজ তিব্বত দখলের পর থেকেই প্রতিরোধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলাই। ১৯৫৯ সালে চিন প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি ভারতে আসেন। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে, তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে গোটা বিশ্বে তাঁর নেতৃত্বেই প্রতিবাদ করে চলেছেন তিব্বতিরা। তিব্বতে চিনা দখলদারির বিরুদ্ধে জনমত গঠনের পাশাপাশি ভারতে ‘নির্বাসিত তিব্বতি সরকারে’রও নেতৃত্বে রয়েছেন দলাই। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরকারি প্রতিনিধিদের আলোচনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভস সম্প্রতি ‘তিব্বত-চিন বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহ প্রদান’ আইন ৩৯১-২৬ ভোটে পাশ করেছে। সেনেটেও তা পাশ হয়ে গিয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, তিব্বতের ইতিহাস, মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্পর্কে চিনের ‘মিথ্যা তথ্য’-এর মোকাবিলা করতে অর্থ সহায়তা করবে আমেরিকা। তিব্বত তাদের অংশ বলে চিন যে দাবি করে, সেই ভাষ্যের পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই আইনে। তিব্বতের নেতাদের সঙ্গে চিনের যে আলোচনা ২০১০ সাল থেকে বন্ধ হয়ে আছে, তা চালু করার জন্য বেজিংয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করার কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। অভিযোগ, অধিকৃত তিব্বত লাগোয়া পূর্ব লাদাখের কিছু অংশে এখনও ভারতের জমি দখল করে বসে আছে বেজিংয়ের লাল ফৌজ। নরেন্দ্র মোদী সরকার তার প্রায় গোটা দ্বিতীয় পর্ব জুড়ে নানা ভাবে চেষ্টা করেও সামগ্রিক ভাবে চিনা সেনাকে পশ্চাদপসরণ করাতে পারেনি। ফলে তিব্বতের তাস যদি আমেরিকা খেলে, তা ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক হবে বলেই কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে।