ব্রহ্মপুত্রের উপনদীর উপর এই বাঁধই তৈরি করেছে চিন। আটকানো হচ্ছে জল। ছবি: সংগৃহীত।
সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। তার মধ্যেই তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদীর জল আটকে দিল্লির অস্বস্তি বাড়াল পাকিস্তানের মিত্র চিন। তবে দিল্লির অবশ্য দাবি, এতে ভারতের কোনও ক্ষতি হবে না।
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে যথেষ্টই চাপে পড়েছে পাকিস্তান। সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ। আবার সিন্ধুর জলবণ্টন নিয়ে চাপ বাড়িয়েছে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে চিনের সমর্থন পেতে গত কাল সে দেশে দূত পাঠায় পাকিস্তান। তার পরেই তিব্বতে চিনের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
শনিবার চিনা সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, তিব্বতে ইয়ারলাং জ্যাঙ্গবো নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র নদ। তিব্বতের জিগাজ এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের উপনদী জিয়াবুকুকে আটকে লালহো প্রকল্প গড়ছে বেজিং। চিনা সংবাদমাধ্যমের মতে, লালহোই চিনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার।
যেখানে জলপ্রকল্প তৈরি হচ্ছে, সেই জিগাজে শহর সিকিমের খুব কাছেই। আর এখান থেকেই ব্রহ্মপুত্র অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে পড়ছে। জিয়াবুকুর জল আটকানোর প্রভাব ভারতের উপর কতটা পড়বে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, নদীর তীরবর্তী ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলির উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ওই দেশগুলির উপর এর প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এটাই ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরই ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েছিল চিন। ওই প্রকল্পের জেরে এমনিতেই যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে ভারত। লালহো প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্রের জল আটকানোর ঘোষণা সেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। চিনের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্রহ্মপুত্রের মূল প্রবাহে আরও তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: পরমাণু যুদ্ধ করতে গেলে মানচিত্র থেকে পাকিস্তান মুছে যাবে: পাক বিশ্লেষক
মার্চে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাঁবরলাল জাঠ জানিয়েছিলেন, লালহো নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা চিনকে জানানো হয়েছে। চিনও আগে জানিয়েছে, ভারতের উদ্বেগের কথা তারা জানে। তাদের বাঁধগুলিতে জল ধরে রাখা হয় না। রাতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রেও দাবি করা হয়, এই বাঁধের ফলে ভারতের বিপদের আশঙ্কা নেই।
ভারত-চিনের মধ্যে কোনও জলচুক্তি নেই। তবে দু’দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলি নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে দিল্লি ও বেজিং। আন্তঃসীমান্ত নদীগুলি নিয়ে সহযোগিতা বাড়াতে ২০১৩-র অক্টোবর মাসে একটি মউও স্বাক্ষর করেছে দু’দেশের সরকার। এই সমঝোতার ফলে দিল্লিকে ওই নদীগুলির জলপ্রবাহ নিয়ে তথ্য দেয় বেজিং।