প্রতিপক্ষ: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরে বুথের বাইরে গোতাবায়া রাজাপক্ষ (বাঁ দিকে) ও সাজিথ প্রেমাদাসা। শনিবার। এপি
এ বার কি প্রেমাদাসা-পুত্র! নাকি, রাজাপক্ষ বংশেরই কেউ প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার? পদপ্রার্থী ৩৫ জন। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে রেকর্ড। তবু আজ ভোটের দিনে ঘোরাফেরা করল শুধু দু’টি নাম— ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষ এবং নিহত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রণসিঙ্ঘে প্রেমাদাসার ছেলে তথা ইউএনপি-র মন্ত্রী সাজিথ প্রেমাদাসার।
গোতাবায়া ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত। প্রাক্-নির্বাচনী একাধিক সমীক্ষায় তিনিই এগিয়ে। সাজিথ বরং ‘কালো ঘোড়া’। যদিও তাঁর প্রতি দিল্লির প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে বলে দাবি অনেকের। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম শ্রীলঙ্কা সফরে সাজিথকেই তাঁর ‘মিনিস্টার ইন ওয়েটিং’ করা হয়। তাই ভোট শ্রীলঙ্কার হলেও, লড়াইটা আসলে চিন ও ভারতের বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। গোটা অঞ্চলে চিনের প্রভাব বাড়া-কমার প্রশ্নে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে।
ভোটযুদ্ধের চাপা উত্তেজনা আজ ছড়াল শ্রীলঙ্কার রাস্তাতেও। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশের উত্তর-পশ্চিমের পুট্টালাম শহরে ভোটার-ভর্তি একটি বাস লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চলে। ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর না-মিললেও, মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পুলিশের দাবি, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে অন্তত দু’টি বাসে হামলা হয়। পুলিশই বলছে, এক-একটি বাসে একশোরও বেশি ভোটদাতা ছিলেন। এবং বেশির ভাগই সংখ্যালঘু মুসলিম। তাই এই হামলার পিছনেও অনেকে গোতাবায়ার ফ্রিডম পার্টির দিকে আঙুল তুলছে। কারণ, রাজাপক্ষ বংশের ভোটব্যাঙ্ক মূলত বৌদ্ধেরা। আর সাজিথের দলের প্রতি তামিল ও মুসলিম সমর্থন বেশি।
প্রেসিডেন্ট হতে গেলে কোনও প্রার্থীকে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেতে হবে। লড়াইটা কঠিন হতে চলেছে জেনে তাই গোতাবায়া, সাজিথ দু’জনেই ভোটপ্রচারে জনকল্যাণের পাশাপাশি চিন ও ভারত উভয় দেশের সঙ্গেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক পোক্ত করার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটদাতারা কাকে বেছে নিচ্ছেন, সেই উত্তর মিলবে সোমবার।
গোতাবায়া-ই এখন ফ্রিডম পার্টির শীর্ষে। দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষাসচিব হিসেবে তামিল টাইগারদের প্রতিহত করে বিস্তর প্রশংসা কুড়িয়েছেন অতীতে। তবে যুদ্ধাপরাধ, দুর্নীতি এবং চিনকে অন্যায় সমর্থনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ইউএনপি-র উপ-দলনেতা সাজিথের ভাবমূর্তি তুলনায় স্বচ্ছ। ভোটপ্রচারে দেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি দরিদ্রদের বিনামূল্যে আবাসন, শিক্ষার্থীদের পোশাক, মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও শোনা গিয়েছে তাঁকে। বৌদ্ধদের সমর্থন তেমন না-থাকলেও, সাজিথের প্রচারেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মহিলাদের ভিড় চোখে পড়েছে। তাঁর হাঁকডাক কম হলেও, সংখ্যালঘু ও গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক তাঁকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।