গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আন্তর্জাতিক মঞ্চে যত বারই পাক সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উঠেছে, ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন। কিন্তু, এ বার সেই বেজিংই নিজেদের অবস্থান থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়াল বেজিং। ভারত-সহ আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশগুলি সন্ত্রাস দমনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে যে বার্তা দিতে চলেছে, সেই তালিকায় এ বার যোগ দিচ্ছে চিনও। দলে যোগদান সৌদি আরবও। জুন মাসে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের প্লেনারি সেশন বা পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আগে দুই দেশ এবং বিশেষ করে চিনের এই অবস্থান বদল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহ ও কার্যকলাপের উপর নজরদারি এবং ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এফএটিএফ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থা। সন্ত্রাসে মদত দেওয়া, অর্থ জোগানোর অভিযোগে ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এই এফএটিএফ। এই এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় থাকার অর্থ, সেই দেশকে নিরাপদ বলে মনে করা হয় না। সন্ত্রাসে মদত দেওয়া ও অর্থ জোগানের অভিযোগে ধূসর তালিকাভুক্ত করার অর্থ সেই দেশকে সতর্কবার্তা দেওয়া। এর পরের ধাপই কালো তালিকা। সন্ত্রাস দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে সংশিষ্ট দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে এফএটিএফ। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখে সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বহুবার বার্তা দিয়েছে এই সংস্থা। কিন্তু কার্যত কোনও কাজ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে আগামী জুন মাসে বসছে এফএটিএফ-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। তার আগে সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক মহলে নজরে পড়ার মতো কোনও কড়া ব্যবস্থা না নিলে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এফএটিফ। কড়া হাতে শীর্ষ জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের বিচার ও শাস্তির জন্য পাকিস্তানকে বলা হতে পারে। সূত্রের খবর, চিন ও সৌদি আরবের এই অবস্থান বদলের জেরে এ বার এটা কার্যত নিশ্চিত যে, জুনের আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাতেই রাখা হবে। খুব শীঘ্রই ফের এ নিয়ে সরকারি ভাবে ঘোষণা হতে পারে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসককে সপাটে চড়, প্রসূতি মৃত্যুতে উত্তেজনা একবালপুরের হাসপাতালে
আরও পড়ুন: জেলের মধ্যে দেওয়ালে মাথা ঠুকে নিজেকে আহত করার চেষ্টা করল বিনয়
সদস্য দেশগুলির মধ্যে চিন ও সৌদি আরব সন্ত্রাস ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে বরাবর। কিন্তু তারাও এ বার একজোট হওয়ায় পাকিস্তানের বিপদ আরও বাড়তে পারে বলে কূটনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ। তবে শেষ মুহূর্তে তালিকা থেকে সরে গিয়েছে একমাত্র তুরস্ক। বাকি সব দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এককাট্টা।
গত বছরের অক্টোবরে ভারত সফরে এসেছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট। বেসরকারি সফর হলেও তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শি চিনফিংয়ের কথা হয়েছিল। শিনফিংয়ের সফরের পর ভারতের বিদেশমন্ত্রক থেকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদের সামগ্রিক বিপদ নিয়ে দু’জনই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুই নেতাই মনে করেন, সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ, অর্থ জোগান ও মদতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিশ্বের আরও শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তোলা উচিত। একজোট হওয়া উচিত বড় দেশগুলির। শিনফিংয়ের সফরের কয়েক মাসের মধ্যেই চিনের এই অবস্থান বদল ভারতের কাছে অবশ্যই স্বস্তির খবর। পাশাপাশি চিনের এই অবস্থান বদল ভারতের কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন কূটনৈতিকরা।