মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল। ছবি: সংগৃহীত
ছ’দশক পরে পরিবর্তন আসতে চলেছে কিউবার কমিউনিস্ট সরকারের নেতৃত্বে। শাসক কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদে থাকবেন না কাস্ত্রো পদবির কেউ। তবে তাতে দেশে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, কিউবার তরুণ প্রজন্মের চাপে বরং ধীরে ধীরে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
৬০ বছর ধরে কিউবার নেতৃত্বে ছিলেন কিউবার কমিউনিস্ট বিপ্লবের জনক ফিদেল ও পরে তাঁর ভাই রাউল কাস্ত্রো। আজ কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেলের হাতে কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদ ফার্স্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব তুলে দেবেন রাউল। সেইসঙ্গে অন্তত আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হবে কিউবার রাজনীতির একটি অধ্যায়।
আক্ষরিক অর্থেই মিগুয়েল ডিয়াজ়-ক্যানেল কিউবার পরবর্তী প্রজন্মের নেতা। ১৯৫০-এর দশকে কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বিপ্লব তাঁর জন্মের আগের ঘটনা। বরাবরই সামরিক উর্দি পরতে পছন্দ করতেন ফিদেল ও রাউল। কিন্তু মিগুয়েলের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক নেই। বিটলসের গানে ও আধুনিক প্রযুক্তির ভক্ত মিগুয়েল কাস্ত্রোদের চেয়ে অনেক অর্থেই আধুনিক।
কিন্তু এই পরিবর্তনে কিউবার শাসনতন্ত্রের কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, ক্ষমতা থাকছে কমিউনিস্ট পার্টির হাতেই। কিউবার প্রাক্তন কূটনীতিক কার্লোস আলজ়ুগারে ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নরম্যান ম্যাকের মতে, ‘‘কাস্ত্রো
পদবির কেউ শীর্ষ পদে না থাকার অর্থ এই নয় যে কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করার ধরন বদলে যাবে। ২০১৯ সালের নয়া সংবিধানে স্পষ্টই বলা হয়েছে সমাজতন্ত্রে কিউবার আস্থা বদলাবে না।’’
নেতৃত্বে বদলের চেয়ে কিউবার সাধারণ মানুষের অনেক বেশি চিন্তা আর্থিক সঙ্কট নিয়ে। তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে ওই দ্বীপরাষ্ট্র। মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসামগ্রীর অভাব, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য লম্বা লাইন আর স্বাধীনতার অভাবে জেরবার কিউবানেরা।
আর্থিক সংস্কারে কিউবা সরকারের কিছু ভুল পদক্ষেপ, ট্রাম্প জমানায় আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা বাড়া ও করোনা অতিমারির ফলে পর্যটকের সংখ্যা কমাই কিউবার বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। ২০২০ সালে ১১ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি কমেছে। ১৯৯৩ সালের পরে এই প্রথম এত বড় ধাক্কা খেয়েছে কিউবার অর্থনীতি।
অনেকের মতে, মিগুয়েলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের ইঙ্গিত না হলেও ধীরে ধীরে তরুণ প্রজন্মের চাপে কিছুটা বদল আনতে বাধ্য হচ্ছে কিউবান সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রের হাতে থাকা অর্থনীতির দরজা বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য অনেকটাই খুলে দিয়েছে কিউবা। সম্প্রতি বাক্স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল ইন্টারনেটের দৌলতে এখন কিউবাতেও মাঝে মাঝেই বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা। মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে আদর্শগত ও রাজনৈতিক ‘নাশকতার’ চেষ্টা রোখা হবে বলে সরকারি ভাবে জানিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তাতে বদলের হাওয়া পুরোপুরি বদলানো যাচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।