বরিস জনসন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লন্ডন হাইকোর্টে আইনি চ্যালেঞ্জ জমা পড়লেও তা আজ খারিজ হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত জিনা মিলার জানিয়েছিলেন, বরিসের এই সিদ্ধান্ত ‘বেআইনি ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার।’ জিনাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন কনজ়ারভেটিভ দলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর।
তবে মিলারের আর্জি ফিরিয়ে দিলেও লর্ড জাস্টিস বার্নেট বলেছেন, জিনা ফের উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাতে পারেন। লন্ডন হাইকোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে জিনা বলেছেন, আদালতের এই রায়ে তিনি হতাশ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সকলেরই মনে হচ্ছে, পার্লামেন্টের আলোচনায় বসা উচিত। বিচারপতি আমাদের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর অনুমতি দিয়েছেন, এতে আমরা খুশি। আমরা সেটাই করব। ওঁরাও বুঝেছেন, আমাদের মামলার গুরুত্ব রয়েছে।’’ গত বুধবার এডিনবরার এক আদালতে বরিসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আনা এমনই আর একটি আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।
এই মামলাগুলোর মূল বক্তব্য, পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চাইছেন, ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া রুখতে এমপি-রা যাতে কোনও আইন পাশ করতেই না পারেন। যদিও ব্রিটেনের সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ‘পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার উদ্দেশ্য সেটা নয়। বরিস নিজের আইনি পরিকল্পনা ছকে ফেলতে চাইছেন এই সময়টায়। আর ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্ক চালানোর জন্য এমপিদের যথেষ্ট সময় দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী’।
আদালতে লর্ড প্যানিক কিউসি বলছেন, পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত সার্বভৌমত্বের আইনি নীতি ভঙ্গ করছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, পার্লামেন্ট সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক, একে আইনি বিষয় হিসেবে দেখা উচিত নয়। লর্ড বার্নেট সব শুনে বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য ফের আবেদন করার অনুমতি দেব। তবে এখনকার আর্জি খারিজ করা হচ্ছে।’’
২০১৭ সালে জিনা মিলার আর্টিকল ৫০ ট্রিগার করার ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের আটকাতে সমর্থ হয়েছিলেন। আর্টিকল ৫০ ট্রিগারের মাধ্যমেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরোনোর প্রক্রিয়া শুরু হত পার্লামেন্টে একটি ভোটাভুটি ছাড়াই।
এই সব জটিলতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, ইস্তফা দেওয়ার কোনও কথা তিনি ভাবছেন না। স্কটল্যান্ড সফররত জনসন বলেছেন, ‘‘আমি ব্রাসেলসে যাব। আমি চুক্তিও করব, আর আমরা নিশ্চিত ৩১ অক্টোবরেই বেরিয়ে আসব আমরা। এটা আমাদের করতেই হবে।’’ আর সেটা না হলে কি তিনি পদত্যাগ করবেন? এ প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এ রকম কোনও সম্ভাবনা নিয়ে আমি ভাবতেই চাইছি না।’’
তবে তাঁর দলের বিদ্রোহী এমপি-রা তাঁকে যথেষ্ট দুঃখ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বরিস। দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েও তাঁদের পাশে রাখতে পারেননি তিনি। বিরোধী দলের সঙ্গে মিলে বিদ্রোহী কনজ়ারভেটিভ সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রুখতে বিল আনায় সায় দেন। প্রসঙ্গত চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রোখার সেই বিলে আজই সম্মতি দিয়েছে পার্লামেন্ট। বিদ্রোহী সদস্যদের প্রসঙ্গে ক্ষোভ জানিয়ে বরিস বলেছেন, ‘‘ওঁরা আমারই বন্ধু। বহু বছর ধরে ওঁদের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমাদের ব্রেক্সিটটা করতে হবে। সেটা করতে গেলে কী কী আশঙ্কা রয়েছে, তা নিয়েও আমাদের স্পষ্ট ধারণা আছে। আর আমি ওই সহকর্মীদের কাছেও ফের পৌঁছতে চাই। তবে শেষমেশ একটাই কথা— ব্রেক্সিট হবেই।’’