ফাইল চিত্র।
আট বছর গণতন্ত্রের পরে মায়ানমার ফের সেই ‘শূন্যে’! ফের বন্দি দেশের নোবেলজয়ী নেত্রী আউং সান সু চি। গত ১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সেনা অভ্যুত্থান ঘটে মায়ানমারে। আটক করা হয় সু চি-সহ একাধিক নেতানেত্রীকে। আজ বেআইনি ভাবে আমদানি করা একাধিক ওয়াকি-টকি বাড়িতে রাখার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল পুলিশ। ফলে আইনের প্যাঁচে সু চি-র ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দিদশা পাকা হল।
সোমবারই নয়া নির্বাচিত সরকারের প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসার কথা ছিল। আচমকাই সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে দেশে। সু চি এবং তাঁর দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’ (এনএলডি)-র বিরুদ্ধে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ এনে, ‘সংবিধান রক্ষার’ দাবিতে আটক করায় নেত্রী-সহ অনেককে। তাঁর দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, নেত্রী তাঁর বাসভবনে রয়েছেন। সেখানেই গৃহবন্দি করা হয়েছে। সু চি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছর জেল হতে পারে। ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’-র মুখপাত্র কি টো তাঁর ফেসবুক পেজেও বিষয়টি জানিয়েছেন।
বহিষ্কৃত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিরুদ্ধেও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ ও আদালত। তবে শোনা যাচ্ছে, নতুন করে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে সেনা। সদ্য হওয়া নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছিল (৮৩ শতাংশ আসন) সু চি-র দল। ভয়াবহ ভাবে হারে সেনার সমর্থনপ্রাপ্ত দল। গুঞ্জন, তার পর থেকেই সেনা অভ্যুত্থানের ছক কষছিল বাহিনী। নতুন করে ভোট হলে তার পরিণতি কী হতে পারে, একপ্রকার নিশ্চিত কূটনীতিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের আশঙ্কা, গত আট বছরে যে ভাবে একটু একটু করে গণতন্ত্র গড়ে উঠছিল মায়ানমারে, তা শেষ হওয়ার মুখে। কারণ, গণতন্ত্রের দাবি তোলার ‘অপরাধেই’ বছরের পর বছর গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল সু চি-কে। বন্দিদশায় সেনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। গণতন্ত্রের দাবিতে তাঁর লড়াই সু চি-কে নোবেল সম্মান এনে দিয়েছিল। যদিও দেশের নেত্রী হওয়ার পরে রোহিঙ্গা মুসলিম প্রসঙ্গে সু চি-র পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি অনেকটাই ধাক্কা খায়।
সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে সু চি-র দল। মঙ্গলবার রাতে তাদের সমর্থনে ইয়াঙ্গনের পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, থালা-বাসন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। সেনার সমর্থনেও মিছিল হয়েছে ওই রাতে। সেখানেও কম লোক হয়নি, কমপক্ষে তিন হাজার।