মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর দোষীদের আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি।
বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সে। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সেই শীর্ষ নেতা সোহেল মেহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিল ঢাকার আদালত। শীর্ষ ওই জঙ্গি নেতা ঢাকায় হোলি আর্টিজান কাফে হামলারও মূল চক্রী ছিল। কাফেতে হামলার ঘটনায় সোহেল মেহফুজ-সহ মোট ৭ অভিযুক্তকে বুধবার মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ আদালত।
২০১৬-র ১ জুলাই ৫ সশস্ত্র জঙ্গি ঢুকে পড়ে ঢাকার গুলশন এলাকার অভিজাত ‘হোলি আর্টিজান কাফে’তে। ওই জঙ্গিরা কাফেতে থাকা সবাইকে প্রায় ১২ ঘণ্টা পণবন্দি করে রাখে। একে একে হত্যা করে ২২ জনকে। তার মধ্যে ১ ভারতীয়-সহ ১৮ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। পরে কমান্ডো অভিযানে মৃত্যু হয় ৫ জঙ্গিরই।
তদন্তে জানা যায়, ওই হামলা চালিয়েছিল বাংলাদেশ এবং ভারতে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র আইসিসপন্থী গোষ্ঠী। হামলার অন্যতম মূল চক্রী ছিল শীর্ষ জেএমবি নেতা হাতকাটা নাসিরুল্লা। জানা যায়, বিহারের মুঙ্গের থেকে চোরা পথে মালদহ হয়ে আমের ঝুড়িতে পাচার করা হয়েছিল হামলায় ব্যবহৃত একে-২২ রাইফেল। অস্ত্রপাচার থেকে শুরু করে গোটা পরিকল্পনাটি ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লার। সে ২০১৪-র বর্ধমান বিস্ফোরণেরও অন্যতম পাণ্ডা।
আরও পড়ুন: কলকাতার সংস্থা দু’বছর অর্থ পায়নি অ্যান্ড্রুর থেকে
ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র তদন্তে জানা যায়, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ‘বোরখা ঘর’ বলে একটি দোকান খুলে তার আড়ালেই দীর্ঘ দিন ধরেই জঙ্গি সংগঠন চালাচ্ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা। এ রাজ্যে বসেই সে ভারত এবং বাংলাদেশে সংগঠন বাড়ানোর কাজ করছিল। এনআইএ-র তদন্তকারীদের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে এ রাজ্যে জেএমবি-র কার্যকলাপ প্রকাশ্যে চলে আসে। ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর প্রথমে ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দেয় নাসিরুল্লা। কিন্তু, আদর্শগত প্রশ্নে ভারতে দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় সে ফিরে যায় বাংলাদেশে। ঘাঁটি গাড়ে মালদহ লাগোয়া সে দেশের চাপাই নবাবগঞ্জ এলাকায়। ঢাকায় কাফে হামলার ঠিক এক বছর পর সেখান থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা তাকে গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে সুদান, সরব বিশ্বের নারীরা
অন্য দিকে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্ত শেষে কলকাতার আদালতে শুরু হয়ে যায় বিচার প্রক্রিয়া। এনআইএ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। এখনও পর্যন্ত ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩১ জনকে। খাগড়াগড় মামলায় এখনও ফেরার জেএমবি-র অন্যতম নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন। বিচার চলাকালীন নিজেদের দোষ কবুল করেছেন ২৪ জন। ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হয়েছে দোষীদের।
ঢাকার কাফে হামলার ঘটনায় মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। ঘটনার সময়ে মৃত্যু হয় ৫ জঙ্গির এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ এবং র্যাবের সঙ্গে সংঘর্যে মৃত্যু হয় আরও ৮ অভিযুক্তের। বাকি ৮ জনের মধ্যে ৭ জনের এ দিন মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্য ১ জনকে আদালত বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: হংকং-ভোট নিয়ে চুপ চিনা সংবাদমাধ্যম