‘ভোট হিম অ্যাওয়ে’: প্যারডি গানে সরব রয় জ়িমারম্যান।
‘দ্য লায়ন কিং’ থেকে ‘দ্য লায়িং কিং’!
গভীর জঙ্গলে ঘুমোতে যায় সিংহ। আর ইনি সেঁধিয়ে যান হোয়াইট হাউসের বাঙ্কারে। পরে সেখান থেকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যের টুইট। তার সঙ্গেই যেন পাল্লা দিয়ে দেশে বাড়তে থাকে করোনা সংক্রমণ আর মৃত্যুমিছিল।
৮০ বছর আগেকার এক জুলু লোকগান ধার করে ওঁরা এ ভাবেই গানে আর স্লোগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলছেন, ‘দুষ্টু লোক।’ কোরাসে— ‘ভোট হিম অ্যাওয়ে।’ কিংবদন্তি পিট সিগারের বোন পেগি সিগার থেকে শুরু করে, ১৯৬১-তে ‘লায়ন স্লিপ্স টুনাইট’ গাওয়া ‘দ্য টোকেন’-এর লিড ভোকাল জে সিগ্যাল— ট্রাম্পকে হটাতে গান-মিছিলে শামিল শয়ে-শয়ে। গানে উঠে এসেছে করোনা-মোকাবিলায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে শুরু করে, ট্রাম্পের পুতিন-প্রীতি, অভিবাসন নীতি, তালিবানদের জন্য আফগানিস্তানে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগও।
কার্যত ‘গান-পয়েন্টেই’ ট্রাম্প। ‘লায়ার টুইটস টুনাইট’-এর তিনটে সংস্করণ মাস ছয়েক ধরে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে চতুর্থ ব্যঙ্গ-বাণ আনছেন বছর তেষট্টির গীতিকার-গায়ক রয় জ়িমারম্যান। লক্ষ্য একটাই— ট্রাম্প বাদ। যে-ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বার বার বাক্ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে নিশানা করে প্যারডি! ইমেলে জ়িমারম্যানের উত্তর, ‘‘প্রতিবাদে আপনারাও তো কুশপুতুল পোড়ান! আমরা আবার এটাই পারি। নেতাদের, বিশেষত প্রেসিডেন্টকে নিয়ে উপহাস করাটা অ্যাপল-পাইয়ের থেকেও অনেক বেশি আমেরিকান বলে মনে হয় আমাদের।’’
আরও পড়ুন:নতুন প্রশাসনের কাছে আর্জি, মেধাবীর স্বপ্ন সুরক্ষিত থাকুক
স্ত্রী মেলানি হার্ভেকে (জ়িমারম্যান নিজেই সতর্ক করলেন, ‘মেলানিয়া নয় কিন্তু’) নিয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রথম এই প্যারডি-কোলাজ অনলাইনে পোস্ট করেন শিল্পী। কারও হাতে গিটার, তো কারও হারমোনিকা। কেউ স্যাক্সোফোনে, কেউ আবার গলা মেলালেন ট্রাম্পের জন্য ‘পিঙ্ক স্লিপ’ হাতে নিয়ে। জ়িমারম্যানের ‘ভোট হিম অ্যাওয়ে’ সিরিজ় ইতিমধ্যেই দেখেছেন প্রায় ১০ কোটি নেটিজ়েন।
এমন গান বাঁধার কথা মাথায় এল কী ভাবে? প্যারডির চতুর্থ সংস্করণ নিয়ে চরম ব্যস্ততার মুখেই জ়িমারম্যান ক্যালিফর্নিয়া থেকে বললেন, ‘‘গত এপ্রিলে নেটফ্লিক্সে ‘জো এগ্জ়টিক: টাইগার কিং’ সিরিজ় দেখে আমার স্ত্রীই প্রথম শব্দবন্ধটা ধরিয়ে দিলেন— ‘ডন এগ্জ়টিক: লায়িং কিং’। তার পর কখন জানি, উ-ই-মো-ও-হে কোরাসটা বদলে গেল ভোট হিম অ্যাওয়ে-তে।’’ পুরো গানটা অবশ্য জ়িমারম্যানের অনুরোধে লিখে দেন নবতিপর বৃদ্ধা এড মরিস। গিটার হাতে এক সময়ে যিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন মেয়েদের লোকগানের দল ‘দ্য ম্যাড হেটার্স’-এ।
এত রাগ কেন ট্রাম্পের উপরে? জ়িমারম্যানের জবাব— ‘‘এমন বর্ণবিদ্বেষী, অগণতান্ত্রিক, প্রেসিডেন্ট এর আগে দেখিনি। তবে মানুষটা যে আদতে অকর্মণ্য, সেটাই বাঁচোয়া। গান নিয়ে অনেক বিরোধিতা এসেছে। সঙ্গে ইমেলের বন্যা, যেখানে লোকে বলছেন, কঠিন সময়ে এই প্যারডিই নাকি তাঁদের ভরসা দিয়েছে।’’
সমীক্ষা বলছে, জনপ্রিয়তার নিরিখে ট্রাম্পের থেকে অন্তত ১৭ পয়েন্টে এগিয়ে বাইডেন। তা-হলে আর গান-স্লোগানের কী দরকার! উত্তরে ‘সতর্ক’ জ়িমারম্যান, ‘‘২০১৬-য় ঠকেছি। ধরে নিয়েছিলাম, হিলারি আসছেন। পরে চোয়াল ঝুলে গেল আমাদেরই। বরং গানটা চলুক।’’
জ়ুলুতে ‘লায়ন স্লিপ্স টুনাইট’ লোকগানটি লিখেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অভিবাসী শ্রমিক-গায়ক— সোলোমন লিন্ডা। তিনি গাইতেন ‘ইভনিং বার্ডস’ নামের একটি গ্রুপের হয়ে। তবে গানটা আদতে জঙ্গলের রাজা সিংহের জয়গান, না বর্শার ফলায় বিঁধে সেই সিংহবধের উল্লাস— ধন্দটা রয়ে গিয়েছে ২০২০-তেও।