অচেনা এক মানসিক সমস্যাগ্রস্ত বৃদ্ধের সেবা করে সমাজমাধ্যমের প্রশংসা পাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা শা’কায়রা অহট্রি এবং তাঁর বয়ফ্রেন্ড ট্রেন্ট। ছবি: টুইটার।
দু’হাতের আঙুলে তুষারঝড়ের রক্তাক্ত ক্ষত। শুরু হয়েছে পচনও। ‘বম্ব সাইক্লোনে’ ধ্বস্ত আমেরিকায় এ ভাবেই তুষারক্ষত (ফ্রস্টবাইট) নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন এক মানসিক সমস্যাগ্রস্ত বৃদ্ধ। যাঁর আর্তি শুনে সাড়া দেন এক যুগল। দুর্যোগ উপেক্ষা করে বৃদ্ধকে নিজেদের ঘরে ঠাঁইও দেন তাঁরা। বৃদ্ধের সেবাশুশ্রূষা করে তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যান।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের বাফেলো শহরের ওই যুগলের এ হেন কীর্তিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সমাজমাধ্যম। অনেকেই বলছেন, এ ধরায় যেন ‘স্বর্গদূতেরা’ নেমে এসেছেন!
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বাফেলোর ওই বৃদ্ধের নামপরিচয় জানতে পেরেছে প্রশাসন। তিনি ৬৪ বছরের জোয়ি হোয়াইট। মানসিক ভাবে অক্ষম জোয়ি গত কয়েক দিনের প্রবল তুষারঝড়ে আটকে পড়েছিলেন। তাঁর দেহে দেখা দিয়েছিল তুষারক্ষতও। ওই অবস্থায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। বাফেলোর রাস্তায় বেরিয়ে তা শুনতে পেয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা শা’কায়রা অহট্রির বয়ফ্রেন্ড ট্রেন্ট। প্রবল ঠান্ডায় জোয়ির হাত ফুলে গিয়েছে। প্রতিটি আঙুলে একাধিক ক্ষত। তা নিয়েই অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন জোয়ি। খবর পেয়ে অচেনা-অজানা জোয়িকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে তোলেন শা’কায়রা। তাঁর বরফঠান্ডা শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে নানা কসরতও করেন। ব্লোড্রায়ার দিয়ে জোয়ির দেহকে উষ্ণ করার চেষ্টা করা ছাড়াও গরম খাবারদাবার দেন। এর পর আপৎকালীন পরিষেবাপ্রদানকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে দুর্যোগে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। জোয়ির হাতে তত ক্ষণে পচন বাড়তে শুরু করেছে।
বেগতিক দেখে ফেসবুকে ওই বৃদ্ধের হয়ে সাহায্যের আর্তি জানান শা’কায়রা। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আপনারা আমাকে চেনেন না। তবে আপনাদের এক ভাই আমার কাছে রয়েছেন।’’ সমাজমাধ্যমে বৃদ্ধের ছবি দেখে শা’কায়রার ঘরে কম্বল নিয়ে আসেন এলাকার অচেনা মানুষজন। এর পর সকলের সাহায্যে জোয়িকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তুষারক্ষতের জেরে জোয়ির হাত ‘ফোর্থ ডিগ্রি ফ্রস্টবাইট’ হয়েছে।
শা’কায়রার পোস্ট দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জোয়ির বোন। তিনি জানিয়েছেন, শা’কায়রারা না থাকলে হয়তো প্রাণ হারাতেন তাঁর দাদা। ‘নিঃস্বার্থ ভালবাসা’ দিয়েই দাদাকে বাঁচিয়েছেন ওই যুগল— বলছেন জোয়ির বোন।
শা’কায়রাদের এই কীর্তি টুইটারে পোস্ট করেছেন কিম্বার্লি লারুসা নামে এক মহিলা। কিম্বার্লির মতে, ‘‘শা’কায়রার ছোটখাটো আঙুলগুলিতেই শুধু নয়, গোটা শরীরে উদারতা মাখানো।’’ সে কাহিনি পড়ে অনেকেই অশ্রুসজল। এক জনের মন্তব্য, ‘‘মানবিকতার প্রতি বিশ্বাস হারাইনি। তবে আরও এক বার তাতে বিশ্বাস জাগালেন এই যুগল!’’