ফের কুপিয়ে হত্যা। ফের বাংলাদেশ। ফের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ। এ বার নিশানায় এক বৃদ্ধ বৌদ্ধ ভিক্ষু।
শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবন এলাকার বৈশারি মঠ থেকে উদ্ধার হয়েছে পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতে কুপিয়ে, গলা কেটে খুন করা হয়েছে মাউং শই উ নামের ওই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে নির্জন এলাকার একটি বৌদ্ধ মঠে একাই থাকতেন ওই ভিক্ষু। এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে খাবার দিতে ওই ভিক্ষুর ঘরে যান তিনি। দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। এক পাশে পড়ে আছে ভিক্ষুর ক্ষতবিক্ষত দেহ। রক্তের উপর চার পাঁচ জন আততায়ীর পায়ের ছাপও দেখেছেন তিনি।
অসহিষ্ণুতার জেরে খুন বাংলাদেশে নতুন নয়। গত মাসে আইএস জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন এক হিন্দু দর্জি। তার আগে খুন হওয়া অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বা নিলয় নীলের মতো মুক্তমনা ব্লগাররা প্রত্যেকেই পরিচিত ছিলেন উগ্র ধর্মীয় আবেগের বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য। অতীত বলছে, ইসলামের কট্টরপন্থা থেকে সরে এসে যাঁরাই অন্য সুরে কথা বলেছেন, তাঁদের সবার উপর অসহিষ্ণু চাপাতির কোপ পড়েছে।
গত মাসেই বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের সমকামী আন্দোলনের পুরোধা জুলহাস মান্নানকে। তার দিন দুয়েক আগে খুন হন রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকি। গত সপ্তাহে ফের রাজশাহিতেই খুন হয়েছেন সুফি ধর্মগুরু শাহিদুল্লা। সেই আতঙ্কের রেশ না কাটতে ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় খুন হলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু।
যদিও এর আগের ঘটনাগুলিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায় স্বীকার করেছে আইএস (ইসলামিক স্টেট) এবং আল কায়দা। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে এই জঙ্গি সংগঠনগুলির উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে এসেছে সরকার। আজকের ঘটনার পরেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দাবি, পারিবারিক হিংসার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড।
শহবাগ আন্দোলনের কর্মী শাফিউল ইসলাম, রাজীব হায়দার, আসিফ মইনুদ্দিনের পর গত বছর অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। ওয়াশিকুর, অনন্ত দাস, নীল, নজিমুদ্দিন সামাদ, রেজাউল সিদ্দিকি, জুলহাস মান্নান, মেহবুব তনয়— নিহতদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমশ।