ectrodactyly

হবু জামাইকে খুন, স্ত্রীর ষড়যন্ত্রে মৃত্যু, ‘লবস্টার বয়’-এর জীবন হার মানাবে ফিল্মকেও

হাতের সঙ্গে গ্র্যাডির পায়ের আঙুলগুলিও ছিল বিসদৃশ। ফলে জীবনের বেশির ভাগ অংশ তার কেটেছিল হুইলচেয়ারেই। কিন্তু তার দেহে ছিল অমানুষিক শক্তি। সার্কাসের খেলা দেখানোও আয়ত্ত করেছিলেন তিনি। তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিলে ‘লবস্টার বয়’।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ১১:০৩
Share:
০১ ১৪

‘একট্রোড্যাক্টিলি’ একটি দুরারোগ্য জিনগত অসুখ। জন্ম থেকেই এই রোগাক্রান্তের হাতের আঙুলগুলি বাঁকা হয়। এক নজরে দেখলে মনে হয় যেন গলদা চিংড়ির সাঁড়াশির মতো দু’টি থাবা। যা দিয়ে প্রাণীটি শিকার ধরে থাকে, আবার আত্মরক্ষার কাজেও ব্যবহার করে।

০২ ১৪

এ রকম ‘আপাত অভিশাপ’কেই আশীর্বাদে বদলে নিয়েছিল স্টাইলস পরিবার। উনিশ শতকে এই মার্কিন পরিবারের নাম ছিল ‘লবস্টার ফ্যামিলি’। পরিবারের সব সদস্যের হাত পায়ের আঙুল বিসদৃশ ছিল। সেই অদ্ভুতদর্শনকেই হাতিয়ার করে সার্কাসে খেলা দেখাতেন তাঁরা। জিনগত অসুখই হয়ে গিয়েছিল অর্থ উপার্জনের পথ।

Advertisement
০৩ ১৪

ক্রমে এই পরিবার নিজেই একটা গোটা সার্কাস-শো হয়ে দাঁড়াল। বিশ শতকের গোড়ায় তাঁদের কার্নিভ্যাল মার্কিন শহরগুলিতে খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সব হিসেব গরমিল করে দিল গ্র্যাডি স্টাইলস জুনিয়র। এই সদস্যের জন্য পরিবারের গায়ে লেগে গেল ‘কলঙ্কিত’ তকমা।

০৪ ১৪

গ্র্যাডির জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৬ জুন, আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গ শহরে। ততদিনে তাঁর বাবার খেলা দেখানোর মজাদার শো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘এক্ট্রোড্যাক্টিলি’ আক্রান্ত সন্তানদেরও তিনি এক এক করে নিয়ে নিচ্ছেন নিজের দলে। তাঁরাও শো-এর অংশ।

০৫ ১৪

হাতের সঙ্গে গ্র্যাডির পায়ের আঙুলগুলিও ছিল বিসদৃশ। ফলে জীবনের বেশির ভাগ অংশ তার কেটেছিল হুইলচেয়ারেই। কিন্তু তার দেহে ছিল অমানুষিক শক্তি। সার্কাসের খেলা দেখানোও আয়ত্ত করেছিলেন তিনি। তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিলে ‘লবস্টার বয়’।

০৬ ১৪

সার্কাস দেখিয়ে স্টাইলস পরিবারের আয় মন্দ হত না। যে মরসুমে কাজ থাকত না, তাঁরা থাকতেন ফ্লোরিডায়। সার্কাসের মরসুমে, তখনকার দিনে তাদের উপার্জন হত প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার ডলার। স্টাইলসদের সার্কাস দলে যোগ দিলেন মারিয়া টেরেসা। কোনও সূত্র অনুযায়ী তাঁর নাম মে টেরেসা।

০৭ ১৪

বাড়ি থেকে পালিয়ে এই কিশোরী যোগ দিয়েছিলেন সার্কাসের দলে। তিনি খেলা দেখাতেন না, শুধু কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। মারিয়ার প্রেমে পড়েন গ্র্যাডি। দু’জনে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে ক্যাথি এই অসুখে আক্রান্ত ছিলেন না। ফলে তিনি ছিলেন বাবার খুব আদরের।

০৮ ১৪

কিন্তু দায়িত্ববান বাবা হওয়ার বদলে স্টাইলস ক্রমশ সুরাসক্ত হয়ে পড়লেন। নেশার ঘোরে স্ত্রীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন। গ্র্যাডি মেনে নিতে পারেননি তাঁর কিশোরী কন্যার প্রেমের সম্পর্কও। বিয়ের আগের দিন ঠান্ডা মাথায় নিজের শটগান দিয়ে মেয়ের হবু স্বামীকে খুন করেন গ্র্যাডি।

০৯ ১৪

প্রথমে পুলিশ এবং পরে আদালত, দুই জায়গাতেই নিজের অপরাধ স্বীকার করেন গ্র্যাডি। তবে তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য কারাবাস থেকে রেহাই পান। কারণ একট্রোড্যাক্টিলি আক্রান্ত বন্দিকে রাখার মতো পরিকাঠামো কোনও মার্কিন কারাগারে তখন ছিল না।

১০ ১৪

পরিবর্তে গ্র্যাডির শাস্তি হয় পনেরো বছরের জন্য গৃহবন্দি থাকার। এই সময়ে তিনি ডিভোর্স করেন প্রথম স্ত্রীকে। দ্বিতীয় বার বিয়ে করে দু’জন সন্তানের বাবাও হন। কিন্তু স্বামী অতিরিক্ত মদ্যপানের নেশা মানতে পারেননি গ্র্যাডির দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনিও বিচ্ছেদ নিয়ে সংসার ছেড়ে চলে যান।

১১ ১৪

গ্র্যাডির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে মারিয়াও বিয়ে করেছিলেন। দ্বিতীয় স্বামীকে ডিভোর্স করে মারিয়া আবার ফিরে আসেন প্রথম স্বামীর কাছে। কিন্তু গ্র্যাডির অপরাধপ্রবণতা ততদিনে আরও তীব্র আকার নিয়েছে। একবার কারাদণ্ড এড়িয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি সব শাস্তির ঊর্ধ্বে।

১২ ১৪

স্ত্রী এবং সন্তানদের উপর গ্র্যাডির অত্যাচারের মাত্রা আগের থেকেও বেড়ে গিয়েছিল। সহ্য করতে করতে শেষে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় মারিয়ার। তিনি তাঁদের প্রতিবেশী সতেরো বছরের ক্রিস ওয়্যান্টকে সুপারি কিলার হিসেবে নিয়োগ করেন। গ্র্যাডিকে খুন করার পারিশ্রমিক হিসেবে আগাম দেড় হাজার ডলার দেন। মারিয়ার দ্বিতীয় বিয়ের সন্তান গ্লেনও ছিলেন আর এর ষড়যন্ত্রী।

১৩ ১৪

রাতের অন্ধকারে গ্র্যাডিকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করেছিলেন ওয়্যান্ট। তিন জনের কেউই তাঁদের অপরাধ গোপন করেননি। আদালতের রায়ে তাঁদের তিনজনেরই দীর্ঘদিনের কারাদণ্ড হয়।

১৪ ১৪

অন্যদিকে, গ্র্যাডি তাঁর পরিবারের মতো সমাজেও আরও বেশি ‘ঘৃণ্য’ বলে চিহ্নিত হন। বিতৃষ্ণার মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল, অন্ত্যেষ্টির সময় ‘লবস্টার বয়’-এর কফিনবহনের জন্যও পরিচিত কেউ রাজি হননি। (ছবি: ফেসবুক ও শাটারস্টক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement