জনজোয়ার: ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করে মিছিল লন্ডনে। শনিবার। রয়টার্স
বাইরে উত্তাল জনতা। আর ভিতরে ৩৭ বছর পরে নজিরবিহীন ভাবে চলছে অধিবেশন। শনিবার এটাই ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ছবি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে যাওয়ার পরে আজ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। ঠিক ছিল, সেই চুক্তি নিয়ে ভোট দেবেন ব্রিটিশ এমপিরা। চুক্তি পাশ হয়ে গেলে ৩১ অক্টোবর ইইউ ছাড়তে ব্রিটেনের আর কোনও বাধা থাকবে না।
কিন্তু বরিসের সেই চুক্তি পেশের আগেই আজ দুপুর আড়াইটেতে তাঁর নিজের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির এক এমপি অলিভার লেটউইন ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, ৩১ অক্টোবর যাতে কোনও ভাবেই চুক্তিহীন ব্রেক্সিট না-হয় তা সুনিশ্চিত করতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিসের চুক্তি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা দরকার। যা মাত্র ১১ দিনে সম্ভব না-ও হতে পারে। বরিস বহু বার বলেছেন, ৩১ অক্টোবর যে কোনও মূল্যে ইইউ ছাড়বে ব্রিটেন, চুক্তি হোক চাই না-ই হোক। বরিসের সেই রাস্তা আটকাতেই ব্রেক্সিট ফের স্থগিত করার প্রস্তাব পেশ করেন লেটউইন।
এবং মাত্র ১৬ ভোটের ব্যবধানে সেই প্রস্তাব পাশও হয়ে যায়। লেটউইনের পক্ষে পড়ে ৩২২ ভোট। আর বিপক্ষে ৩০৬ ভোট। কনজ়ারভেটিভদের ‘বন্ধু দল’ ও তাদের জোটসঙ্গী, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি-র এমপিরাও ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। বরিসের এই নতুন চুক্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত নিয়ে যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা নিয়ে ডিইউপি-র প্রবল আপত্তি রয়েছে। লেটউইনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বিরোধী দলনেতা, লেবার পার্টির জেরেমি করবিনও বলেন, ‘‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন।’’
লেটউইনের প্রস্তাব পেশ হয়ে যাওয়ায় প্রবল চটে যান প্রধানমন্ত্রী। রাগত স্বরে বলতে থাকেন, ‘‘এ ভাবে বারবার ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ায় আখেরে ক্ষতি ব্রিটেনেরই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইইউ কর্তাদের বলব, তাঁরা যাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট স্থগিত করার প্রস্তাব মেনে
না নেন।’’ বরিস জানিয়ে দেন, তিনি নিজে ইইউ কর্তাদের কাছে ব্রেক্সিট স্থগিত করার জন্য কোনও আর্জি জানাবেন না। তবে বরিসের কথা যে ইইউ কর্তারা শুনবেন, এ রকম কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত মেলেনি। কারণ ইইউ-ও চুক্তিহীন ব্রেক্সিট চায় না। ফলে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অল্প কিছু দিনের জন্য ব্রেক্সিট পিছোনোর প্রস্তাব এলে ইইউ তা মেনে নেবে বলেই ধারণা কূটনীতিকদের।
তা হলে বরিসের প্রস্তাবিত চুক্তির কী হবে? প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানান, আজ নয়, আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আজ একটা অর্থবহ ভোটাভুটির সুযোগ ছিল। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ হারালাম।’’
পার্লামেন্টের ভিতরে যখন এই উত্তপ্ত আবহাওয়া, লন্ডনের রাস্তায় তখন ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করে মিছিল করছেন হাজার হাজার মানুষ। দ্বিতীয় গণভোটের দাবি তুলে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে জড়ো হন তাঁরা।