প্রতীকী ছবি।
গোটা বিশ্বে করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ কোটি ৮০ লক্ষ। মৃত্যু হয়েছে ২৩ লক্ষ ৬৭ হাজারের বেশি। এই সাড়ে ২৩ লক্ষ প্রাণের ঘাতক সপরিবার ধরে যেতে পারে, একটা কোকাকোলার ক্যানেই!
অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে না ফেললে যাকে চোখে দেখা যায় না, এমন একটি প্রাণ কী পরিমাণ ক্ষমতা ধরে, তা বোঝাতেই হিসেবনিকেশ করে দেখিয়েছেন এক ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ। দৈনিক সংক্রমণ, অতিমারি পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করে বাথ ইউনিভার্সিটির গণিত বিশেষজ্ঞ কিট ইয়েটস দাবি করেছেন, গোটা বিশ্বে ২ কুইন্টিলিয়ন বা ২ বিলিয়ন বিলিয়ন বা ২,০০০০০০০০০০০০০০০০০০ (২-এর পরে ১৮টি ০) সংখ্যক ভাইরাস রয়েছে।
আরও বিশদে জানাতে গিয়ে ইয়েটস বলেছেন, সার্স-কোভ-২-এর গড় ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটার (বা ১ মিটারের ১০ হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ) ধরেছেন তিনি। তার পরে একটি গোলাকার ভাইরাসের আয়তন বার করেছেন। ভাইরাসের গায়ে থাকা স্পাইক প্রোটিনগুলিকেও হিসেবের বাইরে রাখেননি ইয়েটস। গোলাকার হওয়ায় ভাইরাসগুলি একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে থাকলেও তাদের মধ্যে কিছুটা ব্যবধান থাকে। সেটাও গণনার সময়ে মাথায় রেখেছেন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ। সব মিলিয়ে ইয়েটসের হিসেবে, একটি ৩৩০ মিলিলিটারের কোলা ক্যানের ভিতরে আরামে ধরে যাবে গোটা বিশ্বের করোনাভাইরাস পরিবার!
ইয়েটস বলেন, ‘‘ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে... গত এক বছরে যা যা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, যত সংক্রমণ, যত মৃত্যু, যত বিচ্ছেদ, যত ক্ষয়ক্ষতি দেখেছি, তার শিকড় ওই একটা ছোট্ট পানীয়ের ক্যানেই ধরে যায়।’’
এই মুহূর্তে সুখবর একটাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার সপ্তাহে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। কমেছে মৃত্যুও। কিন্তু চিন্তা বাড়িয়েছে ভাইরাসের ক্রমাগত মিউটেশন। আপাতত সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ কেন্ট স্ট্রেন বা ব্রিটেন স্ট্রেন। ভ্যাকসিন কতটা কাজ দেবে এই স্ট্রেনটিকে রুখতে, তা নিয়ে সন্দিহান বিজ্ঞানীরা। ব্রিটেনের জেনেটিক সার্ভেইল্যান্স প্রোগ্রামের প্রধান জানিয়েছেন, দেশে এই স্ট্রেনটিই এখন সবচেয়ে বেশি। এটি এত সংক্রামক, যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুধু সময়ের অপেক্ষা। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ শ্যারন পিকক বলেন, ‘‘এখন যে স্ট্রেনটি দেশে রয়েছে, সেটিরও মিউটেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন মিউট্যান্ট তৈরি হলে, সেটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন আদৌ কাজ দেবে কি না, জানা নেই।’’ মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী, তা জানতে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো। গত কাল অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা-অক্সফোর্ড জুটিকে ‘পাশ’ করার শংসাপত্র দিয়েছে হু। তারা জানিয়েছে, ওই কোভিড ভ্যাকসিনটি মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলির বিরুদ্ধে কাজ দিচ্ছে। ৬৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বেও কার্যকরী বলে দাবি করেছে হু।
আজ আর একটি তথ্য সামনে এসেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী জানিয়েছে, কোনও কোনও সংক্রমিত ‘সুপারস্প্রেডার’-এর কাজ করছেন। স্থূলতা, বয়স, কতটা সংক্রমিত, তার উপর নির্ভর করছে বিষয়টি। এগুলো বেশি হলে সংক্রমিতের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বেশি ভাইরাস নিক্ষিপ্ত হয় বাইরে। হার্ভার্ডের এই পর্যবেক্ষণটি ‘পিএনএএস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।