Suella Braverman

বার বার ভারতীয়দের আক্রমণ-করা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েলা আবার ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!

ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে সুয়েলার আলটপকা মন্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি ব্রিটেনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গন্ডগোলের নেপথ্যে অভিবাসী যোগ খোঁজেন। ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ঘোর বিরোধী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ১২:৩৩
Share:

ঋষি-জমানায় পুরনো পদে ফিরলেন সুয়েলা। ছবি: রয়টার্স।

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ভারতীয় বংশোদ্ভূত? না কি তাঁর পূর্বসূরিদের আদি বাসস্থান পাকিস্তান? তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তার মধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রী— সুয়েলা ব্রেভারমান। ব্রিটেনের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লিজ় ট্রাসের সঙ্গে মতপার্থক্যের জন্য গত ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেই সুয়েলাকেই মন্ত্রিসভায় ফিরিয়েছেন ঋষি। প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেমে দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে গিয়েছিলেন সুয়েলা।

Advertisement

এমনিতে নিন্দকরা বলছেন, ঋষি ততটাই ভারতীয়, যতটা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেনিয়ার! অন্য দিকে, সুয়েলার ভারত-যোগ নিয়ে যতই আলোচনা হোক, তিনিও ঠিক ‘ভারত-হিতৈষী’ নন। বরং ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে বার বার তাঁর আলটপকা মন্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি ব্রিটেনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে গন্ডগোলের নেপথ্যে অভিবাসী যোগ খোঁজেন। তিনি ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)-র ঘোর বিরোধী। এ হেন সুয়েলার মন্ত্রিত্বকালে অভিবাসীদের নিয়ে ‘কঠিন’ পদক্ষেপ করা হলে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

সুয়েলার ভারতীয় যোগ বলতে তাঁর বাবা ছিলেন গোয়ার বাসিন্দা। সুয়েলার মায়ের পূর্বসূরিদের বাসস্থান ছিল তামিলনাড়ু। গত অক্টোবরে সুয়েলা ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়ম-বহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, তিনি ব্যক্তিগত মেল আইডি থেকে স্বরাষ্ট্র দফতরের জরুরি নথি পাঠিয়েছিলেন এক সহকর্মীকে। শোকজ়ের মুখে পড়ে সুয়েলা যুক্তি দিয়েছিলেন, সেটি ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’। তবে কৃতকর্মের জন্য তিনি ক্ষমা চান এবং পদত্যাগ করেন। যদিও ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, প্রধানমন্ত্রী লিজ়ই তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিলেন। এর পর নানা ডামাডোলে লিজ় নিজেও পদত্যাগ করেছেন।

Advertisement

নতুন প্রধানমন্ত্রী সুনক তাঁর মন্ত্রিসভা সাজাচ্ছেন নতুন মুখ দিয়ে। ফিরিয়ে আনছেন কিছু পুরনো মুখকেও। তার মধ্যে অন্যতম ‘পুরনো মুখ’ সুয়েলা। ইতিমধ্যেই সুয়েলার নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। লেবার পার্টির এমপিরা বলছেন, সুনকের সঙ্গে তাঁর পূর্বসূরি বরিস জনসন বা লিজ় ট্রাসের কোনও পার্থক্য নেই। শৃঙ্খলাভঙ্গ করে ইস্তফা দেওয়া কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেত্রীকেই মন্ত্রিসভার জন্য পছন্দ হল সুনকের!

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েলার বেশ কিছু মন্তব্য ‘ভারত-বিরোধী’। যেমন কিছু দিন আগেই সুয়েলা বলেছেন, ‘‘ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি।’’ এর ফলে নয়াদিল্লির নিশানা হতে হয়েছিল লন্ডনকে। এর পর হাউস অফ কমন্‌স-এ তিনি ব্রিটেনে সাম্প্রতিক ধর্মঘটের জন্য বিরোধী লেবার পার্টিকে দায়ী করে উপহাসের মুখে পড়েন। গত ২৮ অগস্ট এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের তপ্ত পরিবেশ নিয়ে দোষ দেন সে দেশের অভিবাসী নীতিকে। উল্লেখ্য, এশিয়া কাপের ওই ম্যাচের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল ব্রিটেনের লেস্টারশায়ার। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ভারত হারাতেই মেল্টন রোড, বেলগ্র্যাভে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়।

তবে শুধু ভারতীয় অভিবাসীরাই নয়, সুয়েলা সেই সমস্ত অভিবাসীকেও আক্রমণ করেছিলেন, তাঁর কথায় যাঁরা ‘ইংলিশ চ্যানেলের তীরে নৌকা ভিড়িয়ে দেন ব্রিটেনে আশ্রয় নেবেন বলে’। তাঁর দাবি, এঁরা প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করেন। বস্তুত, সুয়েলা তাঁর পূর্বসূরি তথা আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীতি পটেলের পদাঙ্কই অনুসরণ করছেন। প্রীতি তো ব্রিটেনের ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ একেবারে মধ্য আফ্রিকার রোয়ান্ডায় নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন!

কম যান না সুয়েলাও। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)-র তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কারণ, এ ভাবেই নাকি ব্রিটেনে অনাবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অভিবাসী সমস্যা নিয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ হল, ব্রিটেনের সিংহভাগ অভিবাসী হল ভারতীয়।’’ তাই ঋষি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রী সুয়েলাকে তাঁর মন্ত্রিসভায় ফেরালেও তাতে ভারত বা ভারতীয়দের জন্য ‘ভাল’ কিছু হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement