দফতর থেকে বেরোচ্ছেন বরিস জনসন। সোমবার লন্ডনে। রয়টার্স
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা এখন সময়ের অপেক্ষা। হাওয়া যে দিকে এগোচ্ছে, তা থেকে অনেকে বলছেন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ঢুকতে চলেছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে বিতর্ক বরাবরই তাঁর সঙ্গী। নাম ঘোষণার আগে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম আবার দাবি করছে, বরিস জনসনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মুশকিল।
কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা বাছাইয়ের জন্য ভোট পর্ব বন্ধ হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দল থেকে অন্য যে নামটি চর্চায়, সেটি এখনকার বিদেশমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। বরিস জনসন বা জেরেমি হান্ট, কাল যাঁরই নাম ঘোষণা হোক, নয়া প্রধানমন্ত্রী শপথ নেবেন বুধবার। ওই দিনই টেরেসা মে আনুষ্ঠানিক ভাবে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তার পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে তিনি শেষ বারের জন্য বক্তৃতা দেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী রানির সঙ্গে দেখা করবেন এবং তার পর তিনিও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে প্রথম বক্তৃতা দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর পদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে টেরেসা মে-কে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরিস জনসনের সামনে রাস্তাটাও খুব মসৃণ হবে না। ইতিমধ্যেই শাসক দলেরই ফিলিপ হ্যামন্ড হুমকি দিয়েছেন, বরিস প্রধানমন্ত্রীর পদে এলে তিনি পদত্যাগ করবেন। হ্যামন্ডের দাবি, বরিসের ব্রেক্সিট নীতির সঙ্গে তিনি সহমত নন। একই ভাবে ইস্তফার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ডেভিড গোক। চুক্তি হোক বা না হোক, ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন— বরিস এই নীতিরই পক্ষে। তিনি বলেছেন, যে করে হোক, ৩১ অক্টোবর ইইউ ছেড়ে বেরোতেই হবে ব্রিটেনকে। তবে জেরেমি হান্ট অবশ্য বলেছেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আরও পিছোতে তাঁর আপত্তি নেই। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন চুক্তি তৈরিতেও পিছপা নন।
এর মধ্যে লেবার পার্টির প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং গর্ডন ব্রাউন জানিয়েছেন, ইইউ থেকে বেরনোর জন্য চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাঁরা মনে করেন, কঠিন পরিস্থিতি থেকে ব্রিটেন আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছবে। ব্লেয়ার একটি দৈনিকে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘চুক্তিহীন প্রক্রিয়ার ফলে কী ঘটতে চলেছে, তা নিশ্চিত ভাবে কেউই বুঝতে পারছে না। কারণ কোনও উন্নত দেশ রাতারাতি এ ভাবে ব্যবসায়িক বন্দোবস্ত পাল্টে ফেলে না।’’ তাঁর মতে, ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোটই একমাত্র উপায়। কেন না, ইইউ আর চুক্তি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে না। ব্রাউনের মতে, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট মানে দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া।
তবে লেবার পার্টির অন্দরেও এখন বড় দ্বন্দ্ব। বিরোধী নেতা জেরেমি করবিনকে একদল মানছেন, আর একদল তাঁর বিপক্ষে। দলের একাংশের মধ্যে ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। করবিন তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দাবি। তা ছাড়া, ব্রেক্সিট নিয়ে ঘোষিত কোনও অবস্থান নেননি করবিন, সেটাও দলে বড় ক্ষোভের কারণ। দ্বিতীয় বার গণভোট হলে তাতেই হয়তো সমর্থন জানাতে হবে করবিনকে, যদিও তিনি সেটাও স্পষ্ট জানাননি।
বিরোধী দল নড়বড়ে হলে আখেরে বরিস জনসনেরই সুবিধা। পার্লামেন্টে এখন শাসক দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। যে কোনও বিল পাশ করাতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি পার্টির উপরে নির্ভর করতে হয় তাদের। এ বার বরিস জনসনকেও পার্লামেন্টের সম্মতি নিয়ে ব্রেক্সিট চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে এগোতে হবে।
চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বলবৎ করতে নয়া প্রধানমন্ত্রী যাতে পার্লামেন্ট অচল করতে না পারেন, তার জন্য গত সপ্তাহে এমপি-রা একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বরিস যদি পদে আসেন, তা হলে নিজের অবস্থান শক্ত করতে দ্রুত ভোটের পথে হাঁটবেন।