Russia Ukraine War

Britain: ‘মিথ্যাচার’ ও শরণার্থী-সঙ্কট উপেক্ষার দায়ে বিদ্ধ ব্রিটেন

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে দেশের মায়া কাটিয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে সীমান্ত পেরোতে বাধ্য হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৪:৫৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে দেশের মায়া কাটিয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে সীমান্ত পেরোতে বাধ্য হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। যুদ্ধ আবহে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পেতে হন্যে এই বাস্তুহারা ইউক্রেনীয়দের জন্য নিজেদের দরজা খুলে দিয়েছে প্রায় সব ইউরোপীয় দেশই। রাতারাতি সারা হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সেই তালিকায় রয়েছে প্রতিপক্ষ রাশিয়াও! কিন্তু মুখ ফেরানোর অভিযোগ উঠেছে ‘বন্ধু’ ব্রিটেনের বিরুদ্ধেই। এই সূত্রে ‘মিথ্যাচারের’ অভিযোগেও বিদ্ধ বরিস জনসন সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি পটেল!

Advertisement

ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হিসাবে শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলায় ব্রিটেনের উপর ভরসা ছিল অনেকটাই। তা উপেক্ষা করে এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনীয়দের জন্য মাত্র ৩০০টি ভিসা দেওয়ায় ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে দেশটি। সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি পটেলকে। কারণ, পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, মানবিকতার খাতিরে সীমান্তবর্তী ক্যালে অঞ্চলে তৃতীয় ভিসা কেন্দ্রটি খোলা হচ্ছে। তবে আদতে দেখা যায় যে সেখানে এমন কোনও কেন্দ্রই নেই!

ব্রিটেনের এই ‘অমানবিক’ আচরণ নিয়ে সরব হয় ফ্রান্স। তার উত্তরে প্রীতি তখন বলেন যে, তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের একটি দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ‘ক্যালেতে গিয়ে সাহায্য করতে’। তবে কোনও শরণার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা এক বাক্যে উড়িয়ে দেন প্রীতি। পরে উঠে আসে, ক্যালেতে আদৌ কোনও ভিসা কেন্দ্র গড়াই হয়নি! বরং সেখানকার যে হস্টেলে তাঁদের থাকার সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে তার গায়ে লাগানো নোটিশে পরামর্শ রয়েছে ব্রাসেলস বা প্যারিসের ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে যোগাযোগ করার।

Advertisement

এই নোটিস সামনে আসতেই বিপত্তি আরও বাড়ে প্রীতির। বিরোধীদের কড়া তোপের মুখে পড়ে তখন আবার প্রীতি জানান, কেন্দ্রটি গড়ার কাজ চলছে। সেটি ঠিক ক্যালেতে নয়, বরং সেখানে যাওয়ার রাস্তায় পড়ে। যার উত্তরে বিরোধীদের কটাক্ষ, শরণার্থীরা কি আদৌ জানতে পারবেন ঠিক কোথায় যোগাযোগ করতে হবে তাঁদের! বিতর্ক আরও বাড়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্তব্যে। তিনি বলে বসেন, ব্রিটেন শরণার্থী-সঙ্কট মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। দু’টি ‘রুট’ ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ ক্যালের কথা উল্লেখই করেননি তিনি।

সীমান্ত পেরোতেই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের তিন বছরের রেসিডেন্সি ভিসা দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলি। তবে ব্রিটেনের সিদ্ধান্তের পক্ষে বরিসের মন্তব্য, ‘‘দেশে কাকে ঢোকানো হচ্ছে , কাকে না তার উপর একটা নিয়ন্ত্রণ তো বিচক্ষণতা।’’ তবে দেশে বসবাসকারী ইউক্রেনীয়দের আত্মীয়দের ব্রিটেনে আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ রকম প্রায় ১৭,৭০০টি ভিসার প্রক্রিয়াগত কাজকর্ম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে বরিস প্রশাসন।

তবে সমস্যায় পড়েছেন বাকিরা। ব্রিটেন আগে জানিয়েছিল, কমপক্ষে দু’লক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে ঠাঁই দেবে তারা। সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০০টি ভিসা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র ক্যালে সীমান্তেই আটকে প্রায় ৬০০ বাস্তুহারা। ‘সঠিক কাগজপত্রের অভাবের’ নাম করে ফেরানোর অভিযোগও তুলেছেন অনেকেই। রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পোল্যান্ডে ঠাঁই পেয়েছেন ১,০২৮,০০০ জন ইউক্রেনীয় শরণার্থী। হাঙ্গেরিতে ১৮০,০০০, মলডোভায় ৮৩,০০০, স্লোভাকিয়ায় ১২৮,০০০, রোমানিয়ায় ৭৯,০০০। রাশিয়া এবং বেলারুসও ঠাঁই দিয়েছে যথাক্রমে ৫৩,০০০ এবং ৪০৬ জনকে। যার থেকে বহুগুণ পিছিয়ে ব্রিটেন।

এই বিতর্কের মাঝেই ভিডিয়োলিঙ্কের মাধ্যমে ‘হাউস অব কমন্স’-এ মঙ্গলবার বক্তব্য রাখলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। যার জন্য রাতারাতি বিশেষ স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আনা হয়েছে ৫০০টি হেডসেট। উল্লেখ্য, এই প্রথম মূল ওয়েস্টমিনস্টার চেম্বারে বক্তব্য রাখবেন কোনও অন্য দেশের রাষ্ট্রনেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement