সূত্রের খবর, বাণিজ্য পাখির চোখ হলেও, জনসন তাঁর সফরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁর চেষ্টা হবে মস্কোর সমালোচনা করে রাশিয়ার উপরে আনা পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞায় ভারতকে শামিল করাও। ভারত অবশ্য ইউক্রেনে প্রাণহানির সমালোচনা করলেও, এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধ শিবিরে নাম লেখায়নি।
বরিস জনসন। ফাইল চিত্র।
পরিকল্পনা এর আগেও হয়েছে। কিন্তু বারবার আটকে গিয়েছে কোভিডের কারণে। অবশেষে ২১ এপ্রিল দু’দিনের সফরে ভারতে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এই সফরে প্রথম বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে যাবেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, শুধুমাত্র মোদীর রাজ্য বলে নয়, ব্রিটেনের রাজনীতিতেও গুজরাতের বড় ভূমিকা রয়েছে। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের অনেকেরই আদি বাসস্থান গুজরাতে। জনসনের গুজরাত সফরের ফলে নিজের দেশে গুজরাতি বংশোদ্ভূত ভোটারদের প্রতি বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাতে ভারত এবং ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ক্ষেত্রগুলিতে বড় মাপের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করবেন বরিস। বিশেষত জোর দেওয়া হবে উচ্চপ্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরে।
আগামী ২১ এপ্রিল আমদাবাদ থেকে এই সফর শুরু হবে। ২২ এপ্রিল দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক। সূত্রের মতে, তাঁর আসন্ন সফরের মূল লক্ষ্য হবে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু চুক্তি রূপায়িত করা। সেই সঙ্গে, আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই মুহুর্তে ব্রিটেনে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা কোণঠাসা বরিস। মনে করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে যে কোনও ধরনের বাণিজ্যচুক্তি তাঁকে কিছুটা অক্সিজেন দিতে পারে। বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অংশিদারি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথাও রয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও কথা হবে।
ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হয়েছিল বছরের গোড়ায়। বরিসের সফরে সেই আলোচনা গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, ২০৩৫-এর মধ্যে বিনিয়োগ অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে অনেকের ধারণা। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদীর সঙ্গে জনসনের বৈঠকের লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ এবং একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি থেকে আসা হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ভারত সফরের আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একনায়কতান্ত্রিক দেশগুলি শান্তি এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বারবার চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ফলে গণতান্ত্রিক ও বন্ধু দেশগুলির একজোট হয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এই অনিশ্চিত সময়ে ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্র এবং বড় অর্থনৈতিক শক্তি সম্পন্ন দেশের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আমার ভারত সফরে দু’দেশের মানুষের কাছে সব চেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ, সেই কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা হবে।”
সূত্রের খবর, বাণিজ্য পাখির চোখ হলেও, জনসন তাঁর সফরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁর চেষ্টা হবে মস্কোর সমালোচনা করে রাশিয়ার উপরে আনা পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞায় ভারতকে শামিল করাও। ভারত অবশ্য ইউক্রেনে প্রাণহানির সমালোচনা করলেও, এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধ শিবিরে নাম লেখায়নি।