বরিস জনসন। —ফাইল চিত্র
বরিস জনসন একেবারে ‘পাঁচ বছরের শিশুর মতো’ আচরণ করছেন— বিরোধী লেবার পার্টির ব্রেক্সিট সংক্রান্ত ছায়াসচিব কির স্টারমার এ ভাবেই বিদ্রুপ করলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে। গত কাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে কোণঠাসা হওয়ার পরে বরিস জনসন একসঙ্গে খান তিনেক চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-কে। কোনওটায় সই করলেন, কোনওটা আবার সই ছাড়াই গেল। তার মধ্যে একটির মোদ্দা কথা, ইইউ নেতাদের উদ্দেশে জানানো হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে চুক্তিটা ভালই হয়েছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের চাপে ফের ব্রেক্সিটের জন্য অতিরিক্ত সময় চাইতে বাধ্য হচ্ছি। আপনারা আদৌ সময় দেবেন কি না, ভেবে দেখুন।
চিঠি নিয়ে বরিসের এই ‘অদ্ভুত’ প্রতিক্রিয়া দেখেই তাঁকে ‘ছেলেমানুষ’ বলে নিশানা করেছেন লেবার পার্টির নেতা স্টারমার। কেউ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বরং আর একটা চিঠি লিখুন। আর তাতে লিখবেন, ‘আমার নাম বরিস জনসন। আমার বয়স পাঁচ বছর’!’’
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বরিস জানিয়েছিলেন, মরে যাই সে-ও ভাল, ব্রেক্সিটের জন্য আর ইইউয়ের কাছে সময় চাইব না। সেই তাঁকেই পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করার আগে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়েছে গত কাল। তার পরেও ক্ষুব্ধ বরিস বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ইইউ কর্তাদের কাছে চিঠি লিখে ব্রেক্সিট স্থগিত করার কথা তিনি নিজে বলবেন না। তবে শেষমেশ বলতে যখন হলই, তখন সেই চিঠিটিতে সই না করে মুখরক্ষার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু তাতে পাল্টা ব্যঙ্গেরই শিকার হলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাক্ষরহীন প্রথম চিঠিতে বরিসের বক্তব্য, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে যদি ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে পাশ না হয়, তা হলে তাঁকে অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জানাতেই হবে। দ্বিতীয় চিঠিটিতে মূলত ইইউয়ে ব্রিটেনের দূতের ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আর তৃতীয় চিঠিটি কিছুটা ব্যক্তিগত স্বরে বরিস লিখেছেন ইইউয়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ককে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি দেরি করতে চান না। কিন্তু তাঁর হাত-পা বাঁধা। এই চিঠিতেই স্বাক্ষর করেছেন বরিস। যেখানে তিনি জানিয়েছেন, ব্রেক্সিটের দেরি হলে তার প্রভাব কতটা ক্ষতিকর হবে, তা পার্লামেন্টকে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁকে অতিরিক্ত সময় চাইতে হচ্ছে, কারণ পার্লামেন্ট সেটাই চায়। বরিসের কথায়, ‘‘ইউরোপীয় কাউন্সিল ঠিক করুক, এই আবেদন শুনে তারা আদৌ এতে সায় দেবে কি না। আমি জানি ব্রেক্সিট চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সব নেতা আপনাদের সমর্থনের উপরে ভরসা রাখতে পারি। ইইউয়ের তরফেও সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বলে এসেছি, পার্লামেন্টেও আবার বুঝিয়েছি, আমি এখনও মনে করি, ফের ব্রেক্সিটের মেয়াদ বাড়ালে ব্রিটেন এবং ইইউয়ের স্বার্থেরই ক্ষতি হবে। দু’পক্ষে সম্পর্কেও তার প্রভাব পড়বে।’’
এই ব্যাখ্যার পরে প্রধানমন্ত্রী ফের বুঝিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেও তিনি পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবেন যাতে নির্ধারিত দিন, ৩১ অক্টোবরেই ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কূটনীতিকদের ধারণা, ইইউ অতিরিক্ত সময়ের আর্জিতে সায় দেবে। যদিও এখনও কিছু নিশ্চিত নয়। আগামী সপ্তাহে চুক্তি পাশ করানোর এবং সময় পিছোনোর লড়াই চলবে পার্লামেন্টে। সোমবারই ফের চুক্তি পেশ করার চেষ্টা করবেন বরিস। মঙ্গলবার সে ক্ষেত্রে তাই নিয়ে ভোটাভুটি হবে। প্রধানমন্ত্রীর একটাই লক্ষ্য, তাঁর চুক্তিটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ভোট জোগাড় করা। কনজ়ারভেটিভ দলের যে ‘বিদ্রোহী’ এমপি-রা আছেন, তাঁরা তাঁর চুক্তিতে সায় দেবেন বলেই আশা বরিসের। ওই এমপি-দের বার্তা দেওয়া হয়েছে, চুক্তির পক্ষে ভোট দিলে দলে ফের স্বাগত জানানো হবে তাঁদের।
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি আগে থেকেই জানিয়েছে, তারা এই চুক্তির পক্ষে ভোট দেবে না। তবে বিরোধী লেবার পার্টির কিছু ব্রেক্সিটপন্থী নেতা যদি বরিসের চুক্তি মেনে নেন, তা হলে অনেকটাই সুবিধে হবে প্রধানমন্ত্রীর। ব্রেক্সিটের জন্য আগামী সপ্তাহটা তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বার গণভোটের জন্যও নিম্নকক্ষে একটি বিল পেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।