বরিস জনসন। ফাইল চিত্র
অতিমারির নিয়ম ভেঙে ফের পার্টির আয়োজনের অভিযোগ উঠল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনের এক সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে সেই পার্টির আমন্ত্রণ পত্র। সেই রিপোর্টে দাবি, ২০২০ সালের ২০ মে যখন দেশ জুড়ে কড়া লকডাউন চলছে, সেই সময়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে মদের পার্টিতে অন্তত ১০০ জন আমন্ত্রিত ছিলেন। আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ব্যক্তিগত সচিব মার্টিন রেনল্ডস। এই ঘটনায় ফের নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী।
অভিযোগ, ২০২০ সালের ২০ মে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে ওই পার্টি হয়েছিল। ব্রিটেনে তখন প্রথম পর্বের কড়া লকডাউন চলছে। লন্ডন পুলিশ ঘোষণা করেছে, প্রকাশ্যে দু’জনের বেশি দেখা করতে পারবেন না। তা-ও সাড়ে ছ’ফুট দূরত্ববিধি মেনে। ঘরে-বাইরে জমায়েতের অনুমতি নেই কোথাও। মে মাসের রোদ ঝলমলে দিনগুলো নিজেদের বাগানে শুধুমাত্র পরিবারের সঙ্গে কাটানোর নিয়ম জারি হয়েছে। নিয়ম ভাঙলেই জরিমানা।
এই পরিস্থিতিতে মার্টিনের তরফে ই-মেলে আমন্ত্রণ পান প্রশাসনের কর্মীবৃন্দ-সহ অনেকেই। তাতে বলা হয়, ‘সুন্দর এই আবহাওয়ায় শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। তবে নিজের মদ নিজেই আনবেন।’ দাবি, বরিস নিজেও জনা তিরিশেক আমন্ত্রিতের সঙ্গে পার্টিতে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সঙ্গিনী ক্যারিও।
প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রবীণ আইনজীবী সু গ্রেকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধী লেবার পার্টি হাউস অব কমন্সে প্রকাশ্যে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশদ ব্যাখ্যা দাবি করেছে। সরকারি তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন। সে কারণে এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এই পার্টির কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন বিশেষ উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস। বরিসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পরে নিজের ব্লগে পার্টির কথা উল্লেখ করেন তিনি। শুধু বিরোধীরা নন, শাসক দলের একাংশ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। স্কটিশ কনজ়ারভেটিভ নেত্রী রুথ ডেভিডসন টুইট করে বলেন, ‘নিজের বাগানে মদের পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী হাজির ছিলেন কিনা, তা বলার জন্য সরকারি তদন্তকারী লাগে না।’
দাবি, কড়া লকডাউন চলাকালীন পার্টির আয়োজনের কথা শুনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের কিছু কর্মীও অবাক হয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মেসেজ চালাচালি প্রকাশ্যে এসেছে। এক কর্মী অন্য জনকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে? এই সময়ে মার্টিন বাগানে জমায়েতের কথা কী করে ভাবছেন?’’ অন্য জনের উত্তর, ‘‘এগুলো কি সত্যি সত্যি হচ্ছে?’’
ওই পার্টির দিন চারেক আগে বাবাকে হারিয়েছিলেন হ্যানা ব্র্যাডি। সংবাদ মাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বললেন, দু’টো ৫৫ বছরের লোকের গল্প এটা। এক জন তাঁর ৫৫ বছর বয়সি বাবা। যিনি কোভিডে মারা গেলেন। দ্বিতীয় জন দেশের ৫৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। যিনি নিজেও কোভিডে ভুগেছেন। দেশবাসীকে বলেছেন, জমায়েত না করতে। অথচ একই সময়ে নিজের বাড়িতে মদের আসর বসিয়েছেন। হ্যানার ক্ষোভ, ‘‘এত সবের পরেও প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা সম্ভব ছিল আমরা সব করেছি।’’
বরিসের বিরুদ্ধে কোভিডবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এই প্রথম নয়। ২০২০ সালে ১৫ মে কয়েক জনের সঙ্গে চিজ় আর ওয়াইন খাওয়ার ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় হইচই পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর তরফে অবশ্য জানানো হয়, কাজের সূত্রেই সে দিন ঘনিষ্ঠ বৈঠক হয়েছিল। ২০২০ সালের ক্রিসমাসে আর একটি কুইজ পার্টির কথাও প্রকাশ্যে আসে। সে বিষয়ে বলা হয়, কর্মীদের উৎসাহ দিতে ওই প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজিত ছিল। তাতে বরিস ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।