ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বেরোচ্ছেন বরিস জনসন। সোমবার। ছবি রয়টার্স।
ব্রিটেনে লকডাউনের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টির অভিযোগ নিয়ে বহু প্রত্যাশিত তদন্ত-রিপোর্ট জমা পড়ল আজ। তাতে বরিস জনসন সরকারের ‘নেতৃত্বের ব্যর্থতা’র কড়া সমালোচনা করেছেন আমলা সু গ্রে। তার পরেই লকডাউনের সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে পার্লামেন্টে ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে তাতে বিরোধীদের আক্রমণের ধার কমল না। বরিসের ইস্তফার দাবিতে অনড় তাঁরা।
লকডাউনের সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটে কোভিড-বিধি ভেঙে পার্টির অভিযোগে বিপাকে পড়েন বরিস। তিনি ইস্তফা দিতে পারেন বলেও জল্পনা শুরু হয়। সু গ্রে-কে তদন্তের ভার দেন জনসন। পরে ১৬টি ঘটনার মধ্যে ১২টি ঘটনার তদন্ত শুরু করে লন্ডন পুলিশও। ফলে সু গ্রে-র রিপোর্টে ওই ১২টি ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
রিপোর্টে গ্রে জানিয়েছেন, এই পার্টিগুলির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ স্তরে কর্মরত ব্যক্তিদের যে শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত তা মানা হয়নি। এমনকি সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের সেই সময়ে যে শৃঙ্খলা মেনে চলার কথা তা-ও না। নেতৃত্বের উচিত ছিল কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্টির অনুমতিই না দেওয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্টি যে দিকে গড়িয়েছে সে দিকে গড়াতে দেওয়া উচিত হয়নি। যে কোনও পেশাদারি কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করলে ওই পার্টিগুলিতে অতিরিক্ত মদ্যপান হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গ্রে জানান, ডাউনিং স্ট্রিটের কয়েক জন কর্মী বিষয়টি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাতে পারেননি।
গ্রে-র মতে, বরিস সরকারের নেতৃত্বের কাঠামো ‘জটিল’। ফলে অনেকেই দায় এড়াতে পারেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে একাধিক পার্টির অভিযোগ উঠেছে। গ্রে জানান, কোভিডের সময়ে বৈঠকের জন্য খোলামেলা স্থান হিসেবে বাগানটিকে ব্যবহার করেছিলেন কর্মীরা। কিন্তু সে জন্য স্পষ্ট ভাবে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। গ্রে-র বক্তব্য, ‘‘ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন।’’
গ্রে যে পার্টিগুলি নিয়ে তদন্ত করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাটে হওয়া একটি পার্টি সংক্রান্ত অভিযোগও। ১৩ নভেম্বর ওই পার্টি হয়। সে দিনই ইস্তফা দেন বরিসের উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস। সংবাদমাধ্যমের একাংশের মতে, ওই পার্টির আয়োজন করেছিলেন বরিসের স্ত্রী ক্যারি। ক্যারি কামিংসকে খুব একটা পছন্দ করতেন না বলেও দাবি সংবাদমাধ্যমের। তবে জনসনের দাবি, তাঁর ফ্ল্যাটে কোনও পার্টি হয়নি। রিপোর্ট প্রকাশের পরে পার্লামেন্টে বরিস বলেন, ‘‘ডাউনিং স্ট্রিটের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি। এখন আর বলে লাভ নেই যে কোনও কাজ বিধি মেনেই করা হয়েছিল বা অনেকে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন।’’ গ্রে-র সুপারিশ মেনে ডাউনিং স্ট্রিট ও ক্যাবিনেট অফিসের কাজকর্মে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি। বরিস জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আলাদা অফিস তৈরি হবে। পুনর্বিবেচনা করা হবে সিভিল সার্ভিসের কার্যবিধি। সরকারের কাজকর্মে উন্নতির জন্য আরও কিছু পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কিন্তু বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টার্মারের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কোনও লজ্জা নেই। তাই তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না। অতিমারির সময়ে দেশবাসী বিপুল আত্মত্যাগ করেছেন। এখন তাঁরা ক্রুদ্ধ। কারণ, তাঁরা বিধি মেনে চলেছেন। অনেকে প্রিয়জনদের দেখেননি পর্যন্ত।’’ স্টার্মারের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সকলকে বোকা ভেবেছেন। তাঁর সততা নেই। তাই তিনি ইস্তফা দেবেন না।’’ স্টার্মারের মতে, কয়েক জন আমলাকে সরানো হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেবেন না।