প্রস্তাবিত হাইপারসনিক বিমান। ছবি সৌজন্যে বোয়িং-এর ওয়েবসাইট।
গতি চাই, আরও গতি, আরও গতি!
সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতিনিয়ত চলছে গতির সঙ্গে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। আরও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর উপায় খুজতে চলছে নিরন্তর গবেষণা। এবার আকাশপথে যোগাযোগে বিপ্লব ঘটতে চলেছে মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িং-এর হাত ধরে। সংস্থার ঘোষণা, হাইপারসনিক বাণিজ্যিক বিমান তৈরি নিয়ে গবেষণা করছে তারা। যার গতি শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ, সাধারণ বিমানের প্রায় দেড়গুণ। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যেতে যে বিমান সময় নেবে মাত্র দু’ঘণ্টা।
রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের হাত ধরে যে গতি-বিপ্লবের সূচনা, তাই আধুনিক থেকে আধুনিকতম ও দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে গতি, গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে কম। কিন্তু সেই বিবর্তনের গতি শ্লথ। কিন্তু বোয়িং-এর ঘোষণায় প্রায় ‘জায়ান্ট লিপ’-এর মতোই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বিজ্ঞানী ও গবেষক মহল।
মার্কিন মুলুকের আটলান্টায় মঙ্গলবারই ছিল বার্ষিক আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস সম্মেলন। সেখানেই বোয়িং ঘোষণা করেছে, হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে যাত্রীবাহী বিমান তৈরির উপর কাজ করছে সংস্থা। যার গতিবেগ হবে ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মাইল। প্রস্তাবিত একটি ডিজাইনও প্রকাশ করেছে সংস্থা। বোয়িং-এর অ্যারোমেকানিকস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাভিদ হুসেন বলেছেন, ‘‘আমরা ভীষণ উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত। সারা বিশ্বকে আরও দ্রুতগতিতে সংযুক্ত করতে চাই আমরা।’’ গত ছ’দশক ধরে এই বিষয়ের উপর কাজ করে চলেছে সংস্থা। তবে প্রযুক্তি ও খরচের চ্যালেঞ্জ রয়েছে আমাদের সামনে। সে সব কাটিয়ে উপযুক্ত সময় এলে বোয়িং-এর হাত ধরেই আসবে হাইপারসনিক বিমান।
আরও পড়ুন: ৩ দশকে চরম দুর্দশায় পড়বেন ৬০ কোটিরও বেশি ভারতীয়, বলছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক
আশার কথা শুনিয়েছেন আমেরিকারই আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোস্পেস ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক স্টুয়ার্ট ক্রেগ। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় হাইপারসনিক বিমান একটা স্বপ্নের মতো ছিল। এই প্রযুক্তি নিয়ে আমরা প্রায় অর্ধশতাব্দী কাটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু শেষ দশকে প্রযুক্তির জগতে যে বিপ্লব ঘটেছে, তাতে এই সম্ভাবনা আর অসম্ভব নয়।’’
স্বপ্ন দেখিয়েও অবশ্য অনেকটাই সংযত বোয়িং। বিমান প্রস্তুতকারী এই সংস্থার বক্তব্য, হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে বিমান তৈরি এখনও প্রাথমিক পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। সামরিক ও সরকারি কাজে ব্যবহার হতে পারে। তবে বাণিজ্যিক ভবে অন্তত আগামী দু’দশকে আকাশে ওড়ার সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: সংবিধানে ৬০ বছরের পুরনো ‘টাইপো’ ঠিক করার আবেদন ফ্রান্সে
বাণিজ্যিক উড়ানের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরাও অবশ্য এখনই এতটা উচ্ছ্বসিত হতে পারছেন না। কারণ হাইপারসনিক বিমান চালাতে গেলে বিপুল খরচ পড়বে। সেটা তুলতে হবে যাত্রীদের পকেট থেকেই। আর সেই খরচ কার্যত উচ্চ মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। সেই কারণেই ২০০৩ সালে মুখ থবড়ে পড়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও এয়ার ফ্রান্সের কনকর্ড বিমান। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে সেই সময় জানানো হয়েছিল, মেরামত ও অন্যান্য খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছিল লোকসানের বোঝা। সেই কারণেই বাণিজ্যিক ভাবে কনকর্ড বিমানের যাত্রায় ইতি পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাইপারসনিক বিমানের ক্ষেত্রেও একমাত্র অন্তরায় এই খরচের দিকটিই। তবে সেই বাধা অতিক্রম করে আকাশে উড়তে পারলে সেটা সত্যিই ‘জায়ান্ট লিপ’ হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।