বব ডিলান
তাঁর নাম যখন ঘোষণা করল নোবেল কমিটি, বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর। তাঁর অনুরাগীরা যেমন আহ্লাদে আটখানা হয়েছিলেন, তেমনই সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, এক পপ গায়ক কী ভাবে সাহিত্যে সর্বোচ্চ সম্মান পেতে পারেন। আর এ বার বব ডিলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ— একটি ওয়েবসাইট থেকে তিনি তাঁর নোবেল-বক্তৃতার বিভিন্ন অংশ টুকেছেন!
ডিসেম্বরে যখন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, তখন সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না ডিলান। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, নোবেল-বক্তৃতা না পাঠালে প্রাপকের হাতে পুরস্কার মূল্যের ৮০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনর (ছ’কোটি টাকা) তুলে দেওয়া যাবে না। এ মাসের গোড়ায় নোবেল কমিটিকে তাঁর ২৬ মিনিটের বক্তৃতার ভিডিও রেকর্ডিং পাঠান ডিলান। যেটিকে ‘অসাধারণ’ ও ‘ঝরঝরে ভাষায় লেখা’ বলে মন্তব্য করেছিল নোবেল কমিটি।
বক্তৃতায় ডিলান বলেছিলেন, ‘মবি ডিক’, ‘দ্য অডিসি’ এবং ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’— এই তিনটি বই তাঁর জীবনকে নানা ভাবে প্রভাবিত করেছে। গোল বেঁধেছে সেখানেই। ডিলান বইগুলো থেকে যে উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন, এক লেখকের দাবি, সেগুলো আদপেই বই থেকে নেওয়া উদ্ধৃতি নয়, বইগুলোর সারাংশ মাত্র। এবং তা-ও আবার ডিলানের নিজের ভাষায় লেখা সারাংশ নয়, ‘স্পার্কনোটস’ নামের এক ওয়েবসাইট থেকে ‘টোকা’। বেন গ্রিনম্যান নামের এই মার্কিন লেখকের দাবি সমর্থন করেছেন আর এক সাংবাদিক-লেখক অ্যান্ড্রিয়া পিৎজার। তিনি আবার তাঁর ব্লগে ডিলানের বক্তৃতা ও ‘স্পার্কনোটস’ থেকে বিভিন্ন লাইন পাশাপাশি তুলে এনে দেখিয়েছেন, কী ভাবে ওয়েবসাইটের লেখা মাত্র দু’-একটা শব্দ বদল করে নিজের বক্তৃতায় ব্যবহার করেছেন নোবেলজয়ী গীতিকার। এই প্রসঙ্গে ডিলানের মুখপাত্র ও নোবেল কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে, কেউই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
এর আগেও ডিলানের বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযোগ উঠেছিল— তিনি অন্য গান থেকে ‘টোকেন’। তবে তাঁর অনুরাগীরা বারবার বলে এসেছেন, লোকসঙ্গীতের ঘরানায়, ‘টোকা’ বা ‘নিজস্ব’ বলে কিছু হয় না। শিল্পী সে-টুকু স্বাধীনতা নিতেই পারেন। কিন্তু কলেজ পড়ুয়ারা যে ওয়েবসাইট ঘেঁটে উত্তর লেখেন, সে রকম সাধারণ মানের ‘নোট’ পড়ে কেন তাঁর নোবেল-বক্তৃতা তৈরি করবেন, কেনই বা মূল বইগুলো থেকে ঠিক উদ্ধৃতি দেবেন না, এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রশ্নগুলো গোলমেলে, উত্তরটা এখনও অজানা।