লঞ্চ দুর্ঘটনার পরে চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ। সোমবার ঢাকায়। রয়টার্স
মর্নিং বার্ড লঞ্চের পেটের মধ্যে অন্য সহযাত্রীদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মহম্মদ মাসুদ। মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে রোজ এক সঙ্গেই ওঠেন সবাই। ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চটি ভেড়ার তোড়জোড়ের মধ্যেই হঠাৎ ময়ূর-২ নামে অন্য একটি বড়সড় লঞ্চ পিছন থেকে ধাক্কা দেয় সজোরে। যাত্রিভরা মর্নিং বার্ড কাত হয়ে উল্টে যেতে সময় লগেছে বড় জোর আধ মিনিট। তার মধ্যে যে সামান্য ক’জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছেন, মাসুদ তাঁদের এক জন। বর্ষার বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে একের পর এক ৩৩টি দেহ। পুরনো ঢাকার স্যার সলিমুল্লা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে সাদা কাপড়ে মুড়ে রাখা সেই সব দেহের মধ্যে সহযাত্রীদের খুঁজছিলেন মাসুদ। প্রায় সকলেই চেনা। কারও দোকান আছে, কেউ বা চাকুরে বা কর্মচারী। মুন্সিগঞ্জ থেকে নিয়মিত আসতেন ঢাকায়।
মুখে কাপড় চাপা দিয়ে বাবা সত্যরঞ্জন বণিককে খুঁজে চলেছেন মেয়ে দোলা। মুন্সিগঞ্জ থেকে এসে নিজের দোকানে বসতেন সত্যরঞ্জন। পাশে তাঁর এক সহযাত্রী বর্ণনা করছেন, লঞ্চের পেট থেকে কী ভাবে তিনি বেরিয়ে আসতে পারলেও বন্ধু সত্যরঞ্জন পারেননি। এখনও তাঁর দেহ মেলেনি। এমন নিখোঁজের সংখ্যা কম নয়। ঠিক কত যাত্রী ছিল লঞ্চটিতে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ বলছেন, ৬০-৭০ জন। মাসুদের দাবি দেড়শোর কম হবে না। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সকাল সাড়ে নটায় হওয়া ঘটনাটির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে উত্তেজিত নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “এমন গাফিলতিও সম্ভব! দুর্ঘটনা নয়, এতো হত্যাকাণ্ড।” মৃতদের পরিবারকে আপাতত দেড় লক্ষ টাকা করে সাহায্য এবং শেষকৃত্যের খরচ দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। তবে আরও দেহ মিললে মৃতের সংখ্যা যে বাড়বে, সে কথা বলছেন উদ্ধারকারী ফায়ার ব্রিগেডের কর্তারা।
আরও পড়ুন: পণবন্দির ছক! হামলা বানচাল স্টক এক্সচেঞ্জে