বৈঠকে খালেদা জিয়া এবং মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো বদল করে বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি নয় বলে জানিয়ে দিল বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। একই সঙ্গে আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানাল বৃহত্তম এই সরকার সমর্থক দলটি।
সম্পর্ক শোধরাতে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সোমবার যখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, সেই সময়েই বিএনপির এই দুই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলটি জানিয়ে দিল, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব আসলে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এমন কোনও প্রস্তাবে বিএনপির মোটেই সায় নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় প্রতি দিনই অভিযোগ করছেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মহল ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য বিএনপির হাত থেকে সম্ভাব্য জয়কে কেড়ে নেওয়া।” দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন এ দিন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের বদলে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব কেউ কেউ দিলেও তাতে আমাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমরা নির্বাচন চাই।”
নির্বাচন কবে, এই প্রশ্নে রবিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আইএমএফ-এর এক কর্তাকে বলেছেন, ‘বড় বড় কয়েকটি সংস্কার’-এর পরেই তাঁরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এ দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং ভোটার তালিকা সংস্কার করে নির্বাচন করতে ৩-৪ মাসের বেশি লাগে না। আমরা চাই আর দেরি না করে নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনই ঘোষণা করুক অন্তর্বর্তী সরকার।” খান জানান, ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও বিএনপি মনে করে না। কার বয়স ১৮ হচ্ছে আর কে মারা যাচ্ছেন, সেই তথ্য সরকারের কম্পিউটারে পৌঁছে যাচ্ছে। সুতরাং কালক্ষেপের যুক্তি নেই। স্থায়ী
কমিটির আর এক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যে সব সংস্কার প্রয়োজন, তার জন্য ২-৩ মাসই যথেষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও স্বার্থ (স্টেক) নেই। তাদের নিয়োগ করা লোকেরাও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবেন।”
প্রতিটি বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অযোগ্যতার পরিচয় দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে। তারেক রহমানের কথায়, “বিএনপির প্রস্তাব ছিল নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার গঠন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার চাই, সেটুকুই করা। বাকি সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সরকারের। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক্তিয়ারই নেই।”
এ দিনই জাতীয়তাবাদী যুব দল, ছাত্র দল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল— বিএনপির ৩টি গণসংগঠন বুধবার আখাউড়া সীমান্তের উদ্দেশে লং মার্চের ডাক দিয়েছে। ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসির ফোনে বলেন, “আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন অফিসে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘তথ্যসন্ত্রাস’-এর প্রতিবাদ জানাতে আমাদের এই কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। পুলিশ যেখানে আটকাবে, সেখানেই থেমে যাব আমরা। আমরা বিশ্বাস করি দু’দেশের মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিষিয়ে দিতে একটি মহল এই সব চক্রান্ত করছে।”
এ দিকে, ইউরোপের ২৮টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ডেকে এ দিন ইউনূস বলেন, দিল্লির বদলে ঢাকা বা অন্য কোনও দেশের শহর থেকে বাংলাদেশের বাসিন্দাদের ইউরোপ যাওয়ার ভিসা দেওয়া হোক। কারণ, ভারত ভিসা না দেওয়ায় ছাত্ররা দিল্লি গিয়ে ভিসা নিতে পারছে না।