ফাইল চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরে বিগ বেনের মেরামতি চলছে। শুধুমাত্র নতুন বছর মধ্যরাতে বেজেছিল প্রকাণ্ড ঘড়ি। এই পরিস্থিতিতে দিন সাতেক আগে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঘোষণা করেন, ব্রেক্সিট পালন করতে ৩১ জানুয়ারি মধ্যরাতে বাজবে বিগ বেন। তাতে খরচ পড়বে বিস্তর। আনুমানিক ৫ লক্ষ পাউন্ড। যাঁরা এই উৎসবে যোগ দিতে চান, বিগ বেনের জন্য তাঁদেরকে ১ পাউন্ড করে দান করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু বরিসের সেই ইচ্ছের কথা শুনে বেঁকে বসেছে হাউস অব কমন্স। তারা জানিয়েছে, এমন ইচ্ছে মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের কাজের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা।
দীর্ঘ এক বছর ধরে বিগ বেনের সংস্কার কাজ চলছে। চারপাশে ভারা বাঁধা রয়েছে। শুধুমাত্র নববর্ষের মধ্যরাতে ঘড়ি বেজেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, ৩১ জানুয়ারি বিগ বেনের ঘড়ি বাজবে। খরচ পড়বে আনুমানিক ৫ লক্ষ পাউন্ড। সংস্কার কাজও এক পক্ষকাল বন্ধ থাকবে। সরকারি তহবিল থেকে ওই অর্থ ব্যয় করা নিয়ে আপত্তি জানান পার্লামেন্টের সদস্যদের একাংশ। বরিস তখন ঘোষণা করেছিলেন ‘বাং আ বব ফর আ বিগ বেন বং’ (যার অর্থ, ঘড়িটিকে বাজাতে সকলে এক পাউন্ড করে সাহায্য দিন)। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি তহবিল ব্যবহার করা না গেলে মানুষ সাহায্য করবেন।’’ এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ১ লক্ষ পাউন্ড উঠেও যায় বলে শোনা গিয়েছে। ব্রেক্সিট সমর্থক এমপি জেকব রিজ় মগ এবং অ্যান্ড্রিয়া লিডসম ওই তহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন। যদিও বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্স কমিশন জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ‘নজিরবিহীন’, মানুষের অর্থও গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
একটি বিবৃতি জারি করে কমিশন জানিয়েছে— ‘‘এই কাজের ক্ষেত্রে যে বিপুল খরচ, তা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা ঠিক করার জন্য হাউস অব কমন্সের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সাংবিধানিক পদ রয়েছে। যে কোনও মহৎ কাজের উদ্দেশে তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে মানুষের অর্থ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা বিচার করে দেখা উচিত।’’
এই ঘোষণার পরে বিপাকে পড়েছে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। তারা জানিয়েছে, বিগ বেনের জন্য ৫ লক্ষ পাউন্ড উঠে গেলেও হয়তো দানের ওই অর্থ দিয়ে ঘড়ি বাজানো যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যাঁরা বেরোতে চান, সেই সব এমপি চান বিগ বেন বাজুক ওই দিন। কিন্তু সরকার এই ‘মামলা’ নিয়ে বিশেষ টানাহেঁচড়া করতে চান না। ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই ঐতিহাসিক দিনটি পালন করার জন্য আরও আয়োজন হয়েছে। সে সবের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ওই অর্থ গ্রহণ করা নিয়ে রাজনৈতিক বাধা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাউস অব কমন্স। কিন্তু আরও বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। সে দিকেই নজর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের ইতিহাসে যুগান্তকারী মুহূর্ত। সব কিছু যথাযথ ভাবে হোক, সেটাই চাই আমরা।’’ এমপিদের একটা বড় অংশই অবশ্য বলছেন, ‘‘তর্ক-বিতর্ক যে হারে চলছে, বিগ বেন হয়তো বাজবে না।’’