জো বাইডেন। -ফাইল ছবি।
বেজিং, ২৩ নভেম্বর: চিনের সঙ্গে জো বাইডেনের গোপন আঁতাঁত রয়েছে বলে ভোটের আগে থেকেই সরব ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁকে এমনকি এ-ও বলতে শোনা গিয়েছিল, বাইডেন ক্ষমতায় এলে আদতে আমেরিকা চালাবে বেজিংই। সরকারি ভাবে তাঁর ‘জয়’ ঘোষণা না-হলেও সেই বাইডেন এখন নিজের ক্যাবিনেট গোছাচ্ছেন। আর ঠিক এমন একটা সময়েই বেসুরো গাইল চিন। বাইডেন হইতে সাবধান— সতর্ক করলেন
চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সরকারি উপদেষ্টা ঝেং ইয়ংনিয়ান। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে অত্যন্ত দুর্বল এই বাইডেন যে-কোনও মুহূর্তে চিনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাতে পারেন।’’ ঘুরিয়ে আবার ট্রাম্পের সুনামও করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
তা-হলে যে বলা হচ্ছিল, বাইডেন এলে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলবে! এই ‘বিভ্রান্তি’ থেকে বরং বেরিয়ে আসাই ভাল— চিনফিং সরকারকে বার্তা দিলেন তাঁর উপদেষ্টা ঝেং। দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক রূপরেখা তৈরি করতে গত অগস্টে তাঁকে উপদেষ্টা পদে বসান চিনফিং।
আমেরিকায় কুর্সিবদল নিয়ে আর পাঁচটা দেশের মতো চিন্তিত চিনও। বাইডেন ক্ষমতায় এলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে, গুয়াংঝাউ প্রদেশে সেই সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় ছিলেন ঝেং। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘দু’দেশের ঠান্ডা যুদ্ধের রেশ এখনও কাটেনি। সহজে তা কাটারও নয়।
আমেরিকার সমাজটাই এখন দ্বিধাবিভক্ত। মনে হয় না, বাইডেনের মতো দুর্বল প্রেসিডেন্ট এই সমস্যা মেটাতে পারবেন।’’
তাঁর আশঙ্কা, ঘরোয়া সমস্যায় নাজেহাল হলেই কূটনীতিক প্যাঁচ কষতে শুরু করবেন ভাবী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। যে কোনও সময় যুদ্ধ বাধিয়ে বসবেন চিনের সঙ্গে। ঝেং-এর কথায়, ‘‘অনেকেই বলেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের বিরোধী। হয়তো ঠিকই। কিন্তু আমার মতে, ট্রাম্প একেবারেই যুদ্ধে আগ্রহী নন।’’
সব মিলিয়ে শুধুই বৈপরীত্য। যে-ট্রাম্প অন্তত এক বার চিনকে গালাগালি না-দিয়ে নিজের দিন শেষ করতেন না, তাঁকে নিয়ে হঠাৎ সুর নরম কেন চিনা কূটনীতিকের? বিশেষজ্ঞেরা ধন্দে। তাঁরাই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে বাইডেন ২৭০-এর ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়ার পরে চিন কিন্তু প্রথমেই শুভেচ্ছা
জানায়নি ভাবী প্রেসিডেন্টকে। কাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বাইডেন-কাঁটা বিঁধিয়ে রেখেছেন। এক টিভি বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘সর্বাধিক জনমত নিয়ে যিনিই আসুন হোয়াইট হাউসে, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে কে জিতেছেন, সরকারি ভাবে সেই বৈধ ঘোষণা তো হোক আগে!’’
ট্রাম্প একাধিক বার বাইডেনকে ‘চিনের বন্ধু’ তকমা দিলেও, ভাবী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিজের ভোটপ্রচারে চিনকে ‘গুন্ডা’ বলতেও ছাড়েননি। সম্প্রতি এ-ও বলেন যে, চিনের উপর নজরদারি চালাতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (হু) ফের ঢুকতে চায় আমেরিকা। করোনা ছড়ানোয় চিনের ভূমিকা নিয়েও কার্যত ট্রাম্পের সুরেই সরব হতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। তা-হলে ঝেং-এর আশঙ্কাই কি ঠিক হতে চলেছে? প্রশ্ন তুলছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
আপাতত সে চিন্তায় আমল না-দিয়ে হোয়াইট হাউসে পালাবদল নিয়েই যেন বেশি আগ্রহ ঘরে ও বাইরে। মামলার জেরে খানিক থমকে থাকা মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়া এখন ভোটের চূড়ান্ত ফলে সিলমোহর দেওয়ার মুখে। যার অর্থ, ট্রাম্পের আশা প্রায় ধূসর। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার কথা প্রায় নিশ্চিত বাইডেনের।