অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে ভুটানের বিদেশমন্ত্রী তান্ডি দোরজি।—ছবি পিটিআই
ভুটানে বেড়াতে গেলে এর পর থেকে আর আগের মতো পর্যটন শুল্কে ছাড় মিলবে না ভারতীয়দের। শুধু ভারত নয়। একই নিয়ম জারি হতে চলেছে বাংলাদেশ এবং মলদ্বীপের ক্ষেত্রেও। এই মর্মে ইতিমধ্যেই একটি নতুন খসড়া নীতি তৈরি করে ফেলেছে ভুটানের পর্যটন দফতর। আগামী মাসে তাতে ক্যাবিনেটের সবুজ সঙ্কেত পেলেই এই আইন কার্যকর করা শুরু হবে। সোমবার নয়াদিল্লিতে এই নয়া নীতি সম্পর্কে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথাও হয়েছে ভুটানের বিদেশমন্ত্রী তান্ডি দোরজির।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তির প্রশ্নে এই ঘটনাটি নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। কারণ কয়েক বছর আগেও থিম্পুর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক ছিল যথেষ্ট মধুর। তবে ডোকলামের পর থেকে সেই মধুর সম্পর্কে কিছুটা হলেও সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। চিনের হাতে ভুটান তামাক খাচ্ছে, এই নিয়ে রাজধানীতে কথাবার্তাও শুরু হয়ে গিয়েছে। ভুটানের মতো একটি দেশে চিন তার কৌশলগত প্রভাব বাড়ালে তা ভারতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। ভুটানের এই নীতি সাউথ ব্লকের উদ্বেগ বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রক এক সূত্রের বক্তব্য, অদূর ভবিষ্যতে যাতে ভুটান এই সিদ্ধান্ত বদলায় তার জন্য চেষ্টা করা হবে। যদিও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক এ বিষয়ে প্রকাশ্যে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে কথোপকথনের সাক্ষী থাকা এক আধিকারিক জানান, ভারতীয় পর্যটকেরা এতে সমস্যায় পড়বে বলেই সন্দেহ বিদেশ মন্ত্রকের। ‘যুক্তি সঙ্গত’ নীতির পক্ষেই সওয়াল করেছে তারা। বিশেষ করে অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো সীমান্ত রাজ্যগুলি থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভারতীয় পর্যটক ভুটানে বেড়াতে যান বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই নয়া নীতির জেরে এই পর্যটকদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস চোখে পড়তে চলেছে।
অন্যদিকে, পর্যটকদের উচ্চমানের পরিষেবা প্রদান করাই এই নীতি পরিবর্তনের অন্যতম কারণ বলে সম্প্রতি জানান ভুটান পর্যটন দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। গত দশ বছরে পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় দশ গুণ বেড়ে যাওয়ায় সেই
পরিষেবার মান আর রক্ষা করা যাচ্ছিল না বলেই দাবি তাঁর। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে মোট ২ লক্ষ ৭৪ হাজার পর্যটক ভুটানে যান। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২ লক্ষই ছিল ভারত, বাংলাদেশ এবং মলদ্বীপ থেকে। তার মধ্যে আবার ভারতীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। কমপক্ষে ১ লক্ষ ৮০ হাজার। পর্যটন শুল্কে ছাড়ই এর পিছনে মূল কারণ বলে দাবি সে দেশের পর্যটন আধিকারিকদের। সেই তুলনায় বাকি বিদেশি পর্যটকদের থেকে ভিসা এবং উন্নয়ন খরচ-সহ আরও নানা খাতে দিন প্রতি মাথাপিছু ২৫০ ডলার (১৮ হাজার টাকা) করে নেওয়া হয়। যার পুরোটাই ভারত, বাংলাদেশ এবং মলদ্বীপের নাগরিকদের এতদিন দিতে হত না। তবে এই নয়া আইনের অন্তর্গত তা দিতে হবে তাঁদেরও।
জলবিদ্যুতের পর পর্যটনই ভুটানে রাজস্ব টানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুটান সরকারের এক প্রতিনিধি জানান, পর্যটন কন্ট্রোল বোর্ডের চোখে ধুলো দিয়ে তিন পড়শি দেশ থেকে আসা পর্যটকদের অত্যন্ত কম মূল্যে ঘর ভাড়া দেয় কয়েকটি সংস্থা। এই ধরনের বেআইনি গেস্ট হাউস এবং হোমস্টে পরিষেবা বন্ধ করার বিষয়টিও এই নতুন নীতি আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানান তিনি।
পাঁচ দিনের সফরে রবিবার ভারতে এসে পৌঁছেছেন ভুটানের বিদেশমন্ত্রী। কলকাতাতেও আসার কথা রয়েছে তাঁর। পর্যটনের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ মাসুল এবং ত্রিপাক্ষিক বিদ্যুৎ নীতি-সহ নানা বিষয়ে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে তাঁর।