ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় স্বল্পোন্নত দেশ (লিস্ট ডেভেলপ্ড কান্ট্রিজ়) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটল বাংলাদেশের। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের চূড়ান্ত সম্মতি মিলেছে শুক্রবার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে এই অর্জনের কৃতিত্ব বাংলাদেশের জনগণকে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আশ্বাস— এই সরকারের নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুত উন্নত দেশের তালিকাতেও পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।
প্রাথমিক ভাবে ২০১৮ সালেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পৌঁছনোর উপযোগী বলে ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (ইউএন-সিডিপি)। নিয়ম অনুযায়ী, পরের তিন বছর উন্নয়নের সেই মানদণ্ড ধরে রাখতে পারলে তার পরে চূড়ান্ত সুপারিশ করে ইউএন-সিডিপি। বাংলাদেশ শুক্রবার এই সুপারিশ অর্জন করেছে বলে শনিবার একটি ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের এ কৃতিত্ব এ দেশের জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার, অর্থাৎ মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬ হলেও বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭। এই সরকারের নেতৃত্বে, উন্নয়নের এই গতি বজায় থাকলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”
সাংবাদিক বৈঠকে শেখ হাসিনা পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার বিষয়গুলি সবিস্তাব তুলে ধরেন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর উন্নয়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর কথাও বলেন তিনি। তাঁর কথায়, “এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।” প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপি মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হত-দারিদ্রের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্রের হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ এবং হত-দারিদ্রে হার ১০.৫ শতাংশে।
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা এখন উত্তাল। ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে শুক্রবার রাতে। এই আইন নিয়ে সমালোচনার জবাবে হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়েছি, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়াও আমাদের দায়িত্ব। শিশু, যুবক থেকে শুরু করে কেউ যেন বিপথে যেতে না পারে, বা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদে জড়িত হতে না পারে সেটা দেখতেই হবে। সে জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া অপরিহার্য।” তিনি মন্তব্য করেন, যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। তবে আইন তার পথেই চলবে।