Joe Biden

বাইডেন দিগন্তে অরুণ-উদয়, বাঙালি আবার জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসনে

বিশ্বে বাঙালি মন্ত্রী একমাত্র রয়েছেন বাংলাদেশে। আমেরিকা-প্রবাসী বঙ্গসন্তান অরুণ মজুমদারকে দিয়ে কি সেই খরা কাটতে চলেছে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ২২:০০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আপত্তিতে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি জ্যোতি বসু।

Advertisement

২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারে তিনি ছিলেন বাঙালি। প্রণব মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর কয়েক মাসের জন্য পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূল ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসায় রেল দফতর ছাড়তে হয়েছিল মুকুলকে। তার পর থেকে বাঙালি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এখনও পর্যন্ত কোনও পূর্ণমন্ত্রী পায়নি। অধুনা মোদী সরকারে যে দুই বঙ্গসন্তান মন্ত্রী রয়েছেন, সেই বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীরা পূর্ণমন্ত্রী নন। প্রতিমন্ত্রী।

২০১৯ সালে ব্রিটেনের নির্বাচনে লেবার পার্টি হেরে যাওয়ায় মন্ত্রী হতে পারেননি বঙ্গতনয়া ব্যারনেস চক্রবর্তী। বরিস জনসন না জিতলে তাঁর মন্ত্রী হওয়া নিশ্চিত ছিল। আপাতত তিনি ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের শ্যাডো অ্যাটর্নি জেনারেল।

Advertisement

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হার কর্তৃত্ববাদীদের কাছে কিছুটা অশনি সঙ্কেত

আরও পড়ুন: বাইডেন ক্যাবিনেটে আসছেন ১ বঙ্গসন্তান-সহ ২ ভারতীয় বংশোদ্ভূত

সারা দুনিয়ায় বাঙালি মন্ত্রী অতএব, একমাত্র রয়েছেন বাংলাদেশে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী-সহ সব মন্ত্রীই নিখাদ বাঙালি।

আমেরিকা-প্রবাসী বঙ্গসন্তান অরুণ মজুমদারকে দিয়ে কি সেই খরা কাটতে চলেছে? জো বাইডেনের মন্ত্রিসভায় অরুণের স্থান পাওয়ার জোর জল্পনা সত্যি হলে তাই-ই হবে বটে। আমেরিকার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং ‘দ্য স্ট্যানফোর্ড ডেলি’ লিখেছে, বাইডেনের মন্ত্রিসভার সদস্য হতে চলেছেন অরুণ। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে, ‘হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যে এজেন্সি রিভিউ টিম্স-এর তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে অরুণ-সহ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূতের নাম রয়েছে’।

প্রকৃত নাম অরুণাভ মজুমদার। আইআইটি বম্বের প্রাক্তনীর পরিচিত ‘অরুণ’ মজুমদার হিসেবেই। আইআইটি বম্বে থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিয়ারিংয়ে ব্যাচেলার্স ডিগ্রি পাওয়ার পর অরুণ চলে যান আমেরিকা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেটিরিয়াল সায়েন্সের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জে প্রিকোর্ট প্রোভোস্টিয়াল চেয়ার প্রফেসরও তিনি। সঙ্গে প্রিকোর্ট ইনস্টিটিউট অব এনার্জির সহ-অধিকর্তা হিসেবেও কাজ করছেন। ২০০৯ সালে সেনেটের অনুমোদন নিয়ে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সি-এনার্জি (এআরপিএ-ই)-র প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা মনোনীত করেন। স্ট্যানফোর্ডের আগে তিনি অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ায় শিক্ষকতা করেছেন। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তিনি যুক্ত।

আমেরিকায় ভারতীয় বা সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি এ বার ঝুলি ভরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছে। —ফাইল চিত্র।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তরে বাঙালিরা ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে বাঙালিরা পরিচিত তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তির জন্য। এর আগে আমরা ব্রিটেনেও দেখেছি শামি চক্রবর্তীকে। লেবার পার্টি জিততে পারলে তিনি হয়তো মন্ত্রী হতেন। তাই অরুণ মজুমদার যদি সচিব (আমেরিকায় মন্ত্রিপদের নাম ‘সচিব’) হন, তা হলে আমি অন্তত অবাক হব না। গোটা বিশ্বের নানা দেশে বাঙালিরা যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন তাঁদের বিদ্যা এবং বুদ্ধির জন্য, সেটাই তো স্বাভাবিক।’’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজিপ্রতিম বসুর কথায়, ‘‘বাইডেন-হ্যারিস শক্তিসচিব হিসাবে যাঁর কথা ভেবেছেন বলে আমেরিকার দু’টি প্রথমসারির দৈনিকের খবর, সেই অরুণ মজুমদার সত্যিই ওই পদে এলে বলতে হবে বাঙালি হিসেবে গর্ব হয়।’’ একটু থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘এর সঙ্গে আরও দু’টো বিষয় বোঝা যায়। প্রথমটা হল, আমেরিকায় ভারতীয় বা সাউথ এশিয়ান কমিউনিটির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। কমলা হ্যারিসকে হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তেও সেই যুক্তি স্পষ্ট। এর অন্যতম কারণ, সেই জনগোষ্ঠী এ বার ঝুলি ভরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছে। ফলে তাঁদের প্রতি একটা দায়বন্ধতা বাইডেনের থাকবে। শুধু বাঙালি বলে তো অরুণের নাম বিবেচিত হয়নি। হয়েছে সাউথ এশিয়ান, বিশেষত এশিয়ান কমিউনিটির একজন প্রতিনিধি হিসেবে। ঘটনাচক্রে তিনি বাঙালি। ফলে তা গর্বের বিষয়।’’ শিবাজির আরও বক্তব্য, ‘‘সত্যিই অরুণকে বাইডেন সচিব হিসাবে নিয়োগ করলে বলতে হবে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে তা ইতিবাচক। বারাক ওবামার সময় থেকে সম্পর্কের যে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, ট্রাম্প জমানাতেও তা বজায় ছিল। অরুণ তো খুবই কৃতবিদ্য মাস্টারমশাই। তাঁর প্রচুর কাজকর্মও রয়েছে। ফলে এটা একজন মেধাবী বাঙালিকেও সম্মান জানানো। উজ্জ্বল মনীষার যে ধারা দেশ এবং বিদেশের নানা প্রান্তে ধরে রেখেছেন বাঙালিরা, তাকেও তো কুর্নিশ জানানো হল এর মধ্য দিয়ে।’’

ব্রিটেনে লেবার পার্টি জিততে পারলে হয়তো মন্ত্রী হতেন শামি চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।

দলের একাংশের বাধায় জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী না হতে পারায় মুষড়ে পড়ছিল বাঙালি। সেই সিদ্ধান্তকে প্রয়াত বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে বর্ণনা করায় সে দুঃখ চতুর্গুণ হয়েছিল। তার খানিকটা প্রশমন হয়েছিল প্রণব রাষ্ট্রপতি হওয়ায়। কিন্তু আমেরিকার মন্ত্রিসভায় বঙ্গসন্তানকে বোধহয় বাঙালিও কল্পনা করেনি। বাইডেন দিগন্তে সেই অরুণের উদয় হলে বিশ্বজোড়া বাঙালির আকাশ আলোকিত হবে বৈকি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement