গ্রিড বিপর্যয়ে অন্ধকারে ডুবে গেল প্রায় গোটা বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর এমনকী হাসপাতালেও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টায় বিদ্যুত্ বিপর্যয় শুরু হওয়ার পরে কোনও কোনও মহল থেকে এ জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা খবর প্রচার করা হয়। এর ফলে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিকেলে ভারতের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন্স) আর পি শাসমল সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “আমাদের দিকে সব ঠিকঠাক রয়েছে। বাংলাদেশের সাব-স্টেশনে কোনও সমস্যার জেরে তারা বিদ্যুত্ নিতে পারেনি।”
বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্তা দাবি করেন, ভেড়ামারা উপজেলায় জাতীয় বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনে ফল্ট হওয়ার পরেই ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ লাইনের সংযোগস্থলে এই ফল্টটি হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত্-লাইনে কোনও বিপর্যয়ের কারণেই সব বিদ্যুত্কেন্দ্রগুলির উত্পাদন বন্ধ হয়েছে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, “জাতীয় গ্রিড ফেল করেছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। কোথাও কোথাও বিদ্যুত্ সংযোগ ফিরেছে।”
সকাল ১১টা নাগাদ রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকার বিদ্যুত্ চলে যায়। জরুরি প্রয়োজনের যে সব ক্ষেত্র লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে থাকে, সেগুলিও বিদ্যুত্বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পরে আধ ঘণ্টার মধ্যেই দেশের অন্যান্য অংশ বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে। গ্রিড বিপর্যয়ের পরে আরও বড় সঙ্কট এড়াতে দেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত মোট ৯টি বিদ্যুত্কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়। এর ফলে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কম উত্পাদন হয়। তার ওপর ভারত থেকে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আসে, তা-ও নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
বিভিন্ন আবাসন ও অফিসে জেনারেটর ও ইনভার্টার চালিয়ে কাজকর্ম করা হলেও চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে সেগুলি চোখ বুজতে থাকে। পানীয় জলের হাহাকার তীব্র হয়। অধিকাংশ পোশাক কারখানাতেই ছুটি দিয়ে দিতে হয়। হাসপাতালগুলিতে অস্ত্রোপচারও বন্ধ রাখতে হয়। বন্ধ থাকে এক্সরে ও অন্যান্য পরীক্ষা।
কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ চ্যানেলে। কোনও কোনও মহল প্রচার করে ভারত থেকে বিদ্যুত্ টেনে নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের মানুষ সঙ্কটে পড়েছে। তবে বিকেলের দিকে সরকারি ভাবে ঢাকা জানায়, নিজেদের সমস্যাতেই এই দুর্ভোগ। বেশি রাতের দিকে ঢাকার কোথাও কোথাও বিদ্যুত্ আসে। তবে মধ্যরাতেও বহু এলাকাই অন্ধকারে ডুবে থাকতে দেখা যায়।
এ দিন রাজশাহির নাটোরে বিরোধী বিএনপি-র নেত্রী খালেদা জিয়া বহু দিন পরে জনসভা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এই সভার টেলিভিশন সম্প্রচার আটকাতেই সরকার দেশের সর্বত্র বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।