তিস্তা নদী। ফাইল চিত্র।
তিস্তার পশ্চিমপাড়ে এক হাজার একরের মতো জমি জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সম্প্রতি রাজ্যের সেচ দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে দিল্লিকে চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বৃহস্পতিবার এই খবর জানিয়ে বলেছেন, তিস্তায় ন্যায্য জলের ভাগ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে চলেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে দু’পক্ষের চুক্তি এখনও স্বাক্ষর না হলেও দু’পক্ষের একটা বোঝাপড়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন একটা প্রকল্প রূপায়িত হলে তিস্তা দিয়ে আরও কম জল বাংলাদেশে আসার আশঙ্কা রয়েছে। সাবরিন আশা প্রকাশ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক এখন যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি নিশ্চিত। সাবরিন বলেন, দিল্লি কী সাড়া দেয় তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ঢাকা ভাববে, যেমন আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের জল সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে তিস্তা ও জলঢাকা নদীর জল আরও বেশি কৃষি ক্ষেত্রে পৌঁছে দিতে দু’টি খাল কাটার জন্য প্রায় হাজার একর জমি এ মাসেই পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বস্তুত প্রায় ৩২ কিলোমিটার খাল কেটে জলঢাকা ও তিস্তাকে সংযুক্ত করে এই মহাপরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য এক দিকে যেমন বিপুল অর্থের প্রয়োজন, দরকার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের অনুমতিও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভাঁড়ারের যা হাল তাতে এত বড় প্রকল্প এই মুহূর্তে রাজ্যের পক্ষে একক ভাবে হাতে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। আর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে কি না, তা নিয়েই প্রশাসনের মধ্যে রয়েছে ধন্দ। এই পরিস্থিতিতে কবে এই প্রকল্প হবে, বা আদৌ কোনও দিন হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে প্রশাসনের মধ্যেই। যে পরিমাণ জমি প্রকল্পে লাগবে, তার তুলনায় সম্প্রতি হস্তান্তর হওয়া জমির পরিমাণও একেবারেই নগণ্য।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মুখ খোলার পরে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, তারাও রাজ্য সরকারের এমন কোনও প্রকল্প নিয়ে অন্ধকারে। অথচ বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে বিষয়টিকে তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। বাংলাদেশের নদী মন্ত্রক ও যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশ মন্ত্রক একটা ‘পেপার’ তৈরি করছে, যা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জানতে চাইছে, প্রকল্পটি ঠিক কী।